যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলােচনা করাে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ভবিষ্যৎ

যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতা বণ্টিত হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সব যুক্তরাষ্ট্রেই একটা মৌলিক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রের ক্ষমতা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি প্রায় সকল যুক্তরাষ্ট্রেই কেন্দ্রীয় সরকারের অস্বাভাবিক প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রের এই অস্বাভাবিক প্রাধান্যকেই ‘কেন্দ্রপ্রবগতা বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এখানে সংক্ষেপে আলােচনা করা যায়ㅡ

[1] কেন্দ্রিকতার ঝোঁক: সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রগুলিতে কেন্দ্রপ্রবপতার অত্যধিক ঝোক দেখে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই ব্যক্ত করছেন যে, হয়তাে অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে। কারও কারও মতে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন।

[2] বিরােধিতা: অনেক রাষ্ট্রবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রগুলিতে সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রপ্রবণতার ঝোক লক্ষ করা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়ােজনীয়তা এখনও অপরিহার্য। কে সি হােয়ার মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রগুলি যে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় পরিণত হওয়ার দিকে এগােচ্ছে, এরকম মনে করার কোনাে কারণ নেই। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রপ্রবণতার দিকে ঝোকের ফলে আঞ্চলিক সরকারগুলির স্বাতন্ত্র্য যে ব্যাহত হবে, এরকম মনে করার কোনাে কারণ নেই। কারণ, এখনও আঞ্চলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার পক্ষে মতামত যথেষ্ট শক্তিশালী। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য চাপিয়ে দেওয়া হলে বাধা আসবে। উদাহরণ হিসেবে কানাডায় কুইবেক ও ওন্টারিওতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে বাধাদানের ঘটনাকে উল্লেখ করা যায়।

[3] গণতন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রয়ােজন: অনেকের মতে, গণতন্ত্র ও দক্ষ শাসনব্যবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রয়োজন এখনও রয়েছে। যেমন, জে এ কোরির মতে, কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অদক্ষ হতে পারে, কিন্তু এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়ােজন। সুতরাং, এর থেকেই মনে হতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়ােজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি।

[4] যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নতুন ধরন: বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যেমন কেন্দ্রপ্রবণতার ঝোক বাড়ছে, তেমনই সমগ্র বিশ্বজুড়েই কিছু জাতিগােষ্ঠীর মধ্যে স্বাতন্ত্রযবােধও প্রবলভাবে দেখা দিচ্ছে। প্রায় সব যুক্তরাষ্ট্রেই বিচ্ছিন্নতাকামী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তবে এটা ঠিক যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নতুন ধরনের বিকাশলাভের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নতুন ধরনের যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলভিত্তিক হবে না, নতুন ধরনের যুক্তরাষ্ট্র গড়ে উঠবে জাতিকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ, নতুন ধরনের যুক্তরাষ্ট্র গড়ে উঠবে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ওপর ভিত্তি করে। এরূপ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাকে খর্ব করা নয়। এরূপ যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য বা আঞ্চলিক সরকারগুলিও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলি থাকলেও ভাষা, ধর্ম, শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, আচার-আচরণ ইত্যাদি যাবতীয় কিছুর স্বাতন্ত্রারক্ষার ও বিকাশসাধনের দায়িত্ব থাকবে রাজ্যের হাতে।

মূল্যায়ন: জাতীয় স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রগুলিতে কেন্দ্রিকতার ঝোক বৃদ্ধি পেলেও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রয়ােজনীয়তা এখনও অপরিহার্য। বহু ভাষা, জাতিসমন্বিত রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রয়ােজনীয়তা এখনও প্রশ্নাতীত। বর্তমান বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির অধিকাংশই হল। যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং এর থেকে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।

Political Science (H.S-11) all Questions/Answers here

Leave a Comment