সাংকেতিক ভাষা কাকে বলে? এই ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
কোনাে আওয়াজ না করে কেবলমাত্র মাথা, হাত, চোখ, আঙুল ইত্যাদি অঙ্গের সঞ্চালনের দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ বা ভাব বিনিময় করা হলে সেই ভাষাকে বলা হয় শরীরী ভাষা। আর, এই শরীরী ভাষাকে নির্ভর করে মূক ও বধিরদের জন্য যে বিশেষ ভাষা তৈরি হয়, তাইই হল সাংকেতিক ভাষা (Sign Language)।
ফরাসি শিক্ষাবিদ Michel De I`Epee ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে সাংকেতিক ভাষা উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীকালে আরও বহু শিক্ষাবিদের সহায়তায় এই ভাষা একটি স্বতন্ত্র ভাষায় উন্নীত হয়েছে।
- সাংকেতিক ভাষার অন্যতম প্রধান পদ্ধতি হল Paget Gorman পদ্ধতি। ‘ক্রিয়া’, ‘পশু’, ‘রং’, ‘আধার প্রভৃতি মৌলিক বিষয়ের সংকেত-সহ প্রায় তিন হাজার সংকেত রয়েছে এই ভাষায়। এই পদ্ধতিতে নীল রং বােঝানাের জন্য এক হাতে রং-এর সংকেত এবং অন্য হাতে আকাশ দেখানাে হয়।
- সাংকেতিক ভাষার শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হল ‘Finger Spelling’ বা Dactylology। এই পদ্ধতিতে বর্ণমালার এক-একটি বর্ণের জন্য হাতের এক-একটি মুদ্রা ব্যবহৃত হয়।
- Paget-Gorman পদ্ধতিতে জটিল কোনােশব্দ বােঝানাে না গেলেও Finger Spelling পদ্ধতিতে তা বােঝানাে যায়। তবে নিরক্ষরদের জন্য এ ভাষা নয়। এ কারণেই এখন Rochester পদ্ধতিতে মৌখিক ভাষা এবং আঙুলের সাহায্যে বানান করার পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
মানুষের ভাষার সঙ্গে বিভিন্ন মানবজাতি ও উপজাতির সম্পর্ক
বর্তমান পৃথিবীতে যেমন প্রায় তিন হাজার ভাষা (Language) প্রচলিত আছে, তেমনি জাতি-উপজাতি (Race) র সংখ্যাও কম নয়।
ভাষাই জাতির ভিত্তিস্বরূপ: প্রকৃতপক্ষে, কোনাে একটি ভাষাকে ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে এক-একটি জাতি বা উপজাতি। যেমন, বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বাঙালি জাতি। কিন্তু সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অন্য কোনাে কারণে কোনাে জাতি যখন তার নিজস্ব ভাষাকে ত্যাগ করে অন্য কোনাে ভাষাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, তখন সে তার জাতিসত্তাকেই ক্রমে ক্রমে হারিয়ে ফেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মিশর বা ইজিপ্টের সভ্যতা যেমন প্রাচীন, তেমনি মিশরীয়রাও ছিল এক প্রাচীন জাতি। ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রাচীন মিশরীয় ভাষার নিদর্শন পাওয়া গেছে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইসলাম ধর্মাবলম্বী, সাম্রাজ্যবাদী আরবজাতির মিশরে অনুপ্রবেশের ফলে সমগ্র মিশরবাসী আরবি ভাষা গ্রহণ করে।
ভাষার বিবর্তন জাতির বিবর্তনেরই নামান্তর: ভাষার নিয়মই হল এই যে, কোনাে একটি ভাষা লুপ্ত হয়ে গেলে সেই ভাষাভাষীদের জাতিগত পরিচয়ও ক্রমে ক্রমে লুপ্ত হয়ে যায়। সেই ভাষাভাষীরা যে পৃথক ভাষা গ্রহণ করে, সেই ভাষার জাতি- পরিচয়েই ক্রমে ক্রমে তারা পরিচিত হয়। তেমনি কোনাে এক ভাষা যখন অন্য কোনাে ভাষায় রূপান্তরিত হয়, তখন সেই প্রাচীন ভাষাভাষীর জাতি-পরিচয়ও পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রত্যেক জাতির ভাষাই তার সভ্যতা-সংস্কৃতির বাহক এবং তার স্বভাববৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্রের পরিচায়ক।