কবির বাস্তববোধ
সমর সেন নাগরিক কবি। তিনি নগর জীবনে অভ্যস্ত। তিনি জানেন শহুরে মানুষের কাছে গ্রাম এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল, এমনকি কবির নিজের কাছেও তাই। ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতা টি নাগরিক কবি সমর সেনের অন্যান্য কবিতার থেকে অনেকটাই আলাদা। নগর জীবনের যন্ত্রণা, জীবন যাপনের ক্লান্তি যা আপাত দৃষ্টিতে আমাদের মনে হয় শুধুমাত্র নগর জীবনের ঘেরাটপে বদ্ধ-যা কোনভাবেই সত্য নয়। এই সমস্ত কিছু আসলে কোন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ নয়। তাই মহুয়ার দেশের ‘শিশিরে ভেজা সবুজ সকালে’ ও ‘মানুষের শরীরে’ থাকে ‘ধুলোর কলঙ্ক’ । নিবিড় অন্ধকারে শোনা যায় মহুয়ার দেশের কয়লা খনি ‘গভীর, বিশাল শব্দ’ । কবিতার এই অংশে সমর সেনের প্রখর বাস্তবতাবোধই পরিলক্ষিত হয়েছি।
রোমান্টিক চেতনার পরিচয়
কবিতাটির নামকরণে রয়েছে রোমান্টিকতার আমেজ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অতি পরিচিত ২৪ ঘন্টার ছন্দময় উত্থান পতনের মৃদু ছন্দপতন ও খুব সহজে অনুভূত হয়। শহরে সভ্যতায় অভ্যস্ত কবির কাছে নাগরিক জীবনের দূষিত ক্লান্তি তাই অসহ্য ঠেকে। এই ক্লান্তি থেকে মুক্তির পেতে মহুয়ার দেশ পৌছাতে চান কবি। দূর থেকে সেই প্রকৃতির দেশকে অনাবিল পরিচ্ছন্নতার স্বর্গরাজ্য বলেই মনে হয় তার-
“অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ, সমস্ত কোন সেখানে পথের দুয়ারের ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য,”
দূষণমুক্ত প্রকৃতির এই স্নেহময় আবেশ ক্লান্ত অবসন্ন শহুরে কবির তাই পরমাকাঙ্ক্ষিত আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায়-
“আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়ার ফুল, নামুক মহুয়ার গন্ধ।”
কবি রোমান্টিক চেতনার যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় কবিতার এই অংশটিতে।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর