ভাষাবিজ্ঞান ও ভাষাতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো?

ভাষা জিজ্ঞাসার ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে ভাষাবিজ্ঞান (Linguistics) ও ভাষাতত্ত্ব (Philology) এর মধ্যে কোন প্রভেদ না করা হলেও ভাষার গভীর জিজ্ঞাসার ক্ষেত্রে দুটি পার্থক্য স্পষ্ট।

প্রথমত : ভাষাবিজ্ঞান হল সম্পূর্ণ এক বিজ্ঞান নির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি, যার সাহায্যে ভাষা বিশ্বাসের বিশ্লেষণ ও চর্চা হয়ে থাকে। আর ভাষা তত্ত্বের ভাষা বিজ্ঞানের সহায়তায় চলে সেই ভাষার বিশ্লেষণ।

দ্বিতীয়ত : ভাষাবিজ্ঞান চর্চায় প্রথম ভাষায় তথ্য সংগ্রহ, তারপর তথ্যের বিজ্ঞানভিত্তিক বিচার বিশ্লেষণ এবং শেষে সাধারন সূত্রের আবিষ্কার সম্ভব হয়। আর ভাষা তত্ত্বের এই সূত্রের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যের আলোচনা চলে।

তৃতীয়ত : ভাষাবিজ্ঞানের প্রাপ্ত সূত্রকে কারণ-ফল-প্রতিক্রিয়ার পরিচিত সাধারণ সূত্রের স্বীকৃতি মেলে। আর ভাষাতত্ত্বের সেই অবকাশ থাকে না।

চতুর্থত : আমেরিকা ও ইউরোপকে কেন্দ্র করে ভাষাবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে উনিশ শতকে ভাষাতত্ত্ব শুরু হয় জার্মানিকে কেন্দ্র করে।

পঞ্চমত : কথ্য ভাষা বিশ্লেষণের উপর গুরুত্ব দিয়ে ভাষার বিজ্ঞান নির্ভর চর্চা চলে। পক্ষান্তরে ভাষাবিজ্ঞানে ভাষাতত্ত্বের প্রাচীন ও আদি মানুষের ভাষা আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে।

ষষ্ঠত : ভাষায় গঠন, তার কার্যপ্রণালী, প্রয়োগ ইত্যাদি বিশ্লেষণ হলো ভাষাবিজ্ঞানের বিষয়। অপরদিকে ভাষাতত্ত্বে উঠে আসে ভাষার উৎস ও ভাষা বংশের পরিচয়, আর সেই সূত্রে চলে ভাসার ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনুসন্ধান।

সপ্তমত : ভাষাতত্ত্ব মানুষের লিখিত সাহিত্য বা দর্শন, ভাষ্য, সূত্র ইত্যাদি নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ বা আলোচনা করে। কিন্তু ভাষা বিজ্ঞান সামগ্রিকভাবে ভাষায় অর্থাৎ মানুষের মুখের ভাষার গঠন, প্রকৃতি, পদ্ধতি সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত চর্চা।

অষ্টমত : ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্র সীমিত। ভাষাবিজ্ঞান পাশাপাশি ভাষার সঙ্গে সমাজ, মানব মন, ভাষা ও সাহিত্যের, ভাষা শিক্ষা প্রণালী, ভাষার সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের সম্পর্কে ইত্যাদি নিয়ে ও আলোচনা করে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment