ভারতের সংবিধানে সম্পত্তির অধিকারের সাংবিধানিক মর্যাদা কী? ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষিত শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।

ভারতের সংবিধানে সম্পত্তির অধিকারের সাংবিধানিক মর্যাদা

১৯৭৮ সালের ৪৪তম সংবিধান সংশােধন অনুযায়ী সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের অংশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ তবে সম্পত্তির অধিকার বর্তমানে মৌলিক অধিকারের কৌলীন্য হারালেও তা বিধিবদ্ধ সাংবিধানিক আইনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হয়।

ভারতের সংবিধানে সংরক্ষিত শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার

সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলির উল্লেখই যথেষ্ট নয়, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের হাত থেকে অধিকারগুলিকে রক্ষা করার ব্যবস্থাও সংবিধানে থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় নাগরিকদের অধিকারগুলি মূল্যহীন হয়ে পড়ে। ভারতীয় সংবিধান-প্রণেতাগণ এই বিষয়টি ভালােভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। একারণেই ভারতীয় সংবিধানে সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকারকে গুরুত্ব সহকারে স্থান দেওয়া হয়েছে। ড. বি আর আম্বেদকর সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকারকে সংবিধানের প্রাণকেন্দ্র’ বলে বর্ণনা করেছেন। ভারতীয় সংবিধানের ৩২নং ও ২২৬নং ধারাতে সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকারের উল্লেখ আছে।

সংবিধানের ৩২নং ও ২২৬নং ধারা: ভারতীয় সংবিধানের ৩২নং‌ ধারা অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকগণ কোনাে মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে তা বলবৎ ও কার্যকর করার জন্য সুপ্রিমকোর্টের নিকট আবেদন করতে পারে। সুপ্রিমকোর্ট মৌলিক অধিকারগুলি বলবৎ ও কার্যকর করার জন্য বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকার পৃচ্ছা এবং উৎপ্রেষণ এই পাঁচ প্রকার লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারে। অনুরূপভাবে, ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ নং ধারা অনুযায়ী অঙ্গরাজ্যগুলির হাইকোর্টসমূহও আদেশ বা নির্দেশ জারি করে অধিকারগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। তবে হাইকোর্টের এই ক্ষমতা কোনােভাবেই সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতাকে ক্ষুল্প করতে পারে না। সংবিধানে উল্লিখিত পাঁচ প্রকারের লেখ, আদেশ বা নির্দেশগুলি হল-

[1] বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ: বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ কথাটির অর্থ হল ‘সশরীরে হাজির করা’। আটক হওয়া কোনাে ব্যক্তি এই লেখ-এর জন্য আবেদন জানালে আদালত নির্দেশ জারি করে আটক ব্যক্তিকে আদালতে সশরীরে হাজির করার নির্দেশ দেয়। এরপর আদালত বিচার করে দেখে যে, আবেদনকারীকে বিধিসম্মতভাবে আটক করা হয়েছে কিনা। আদালত যদি মনে করে আটক বিধিসম্মত নয়, তাহলে আদালত আটক ব্যক্তিকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। কোনাে ব্যক্তি যাতে বেআইনিভাবে আটক না থাকে, তা দেখাই এই লেখ-এর উদ্দেশ্য।

[2] পরমাদেশ: পরমাদেশ শব্দটির অর্থ ‘আমরা আদেশ দিচ্ছি। সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট এই আদেশ জারি করে কোনাে অধস্তন আদালত, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ও জনস্বার্থ সম্পর্কিত কর্তব্য সম্পাদনে বাধ্য করতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে পরামাদেশ জারি করার ক্ষমতা আদালতের নেই।

[3] প্রতিষেধ: প্রতিষেধ কথাটির অর্থ নিষেধ করা। উধর্বতন আদালত নিম্নতন আদালতকে এই নির্দেশ জারি করে তার নিজ সীমার মধ্যে কাজ করার নির্দেশ দিতে পারবে।

[4] অধিকার পৃচ্ছা: অধিকার পৃচ্ছা-এর অর্থ হল ‘কোন অধিকারে। কোনাে ব্যক্তি যদি এমন পদ দাবি করে, যে পদের যােগ্যতা তার নেই, তখন আদালত অধিকার পৃচ্ছার মাধ্যমে সেই দাবির বৈধতা বিচার করে দেখে। দাবিটি অবৈধ প্রমাণিত হলে সেই ব্যক্তিকে পদচ্যুত করা হয়।

[5] উৎপ্রেষণ: উৎপ্রেষণ কথাটির অর্থ হল ‘বিশেষভাবে জ্ঞাত হওয়া। অধস্তন কোন আদালত বা বিচারবিভাগীয় ক্ষমতাসম্পন্ন কোনাে প্রতিষ্ঠান নিজ এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে বা অন্যের এক্তিয়ার আত্মসাৎ করে বিচার করে কোনাে রায় দিলে, এই নির্দেশ জারি করে সেই রায় নাকচ করে দেওয়া যায় এবং নতুন করে শুনানির জন্য মামলাটিকে উচ্চ আদালতে পাঠানাের কথা বলা যায়।

ব্যতিক্রম: ভারতীয় নাগরিকদের শা

সনতান্ত্রিক অধিকারগুলি নিরঙ্কুশ নয়। কতকগুলি কারণে এই অধিকারগুলির ওপর বাধানিষেধ আরােপ করা যায়। যেমন-

  • দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকলে,
  • ভারতের কোনাে অঞ্চলে সামরিক শাসন চালু থাকলে কোনাে সরকারি কর্মচারী বা অন্য কোনাে ব্যক্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কোনাে অবৈধ কাজ করলে, সংসদ আইন করে অবৈধ কাজকে বৈধ বলে ঘােষণা করতে পারে।
  • সশস্ত্র বাহিনী বা জনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ নিযুক্ত কর্মীরা যথাযথভাবে কর্তব্য সম্পাদন করার জন্য কতখানি মৌলিক অধিকার ভােগ করতে পারে, তা পার্লামেন্ট আইনের মাধ্যমে স্থির করে দিতে পারে।

মূল্যায়ন: ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলির ওপর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ কথা বলা যায় যে, শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকারগুলির মাধ্যমেই নাগরিকদের অন্যান্য অধিকারগুলি সুনিশ্চিত হয়।

Political Science (H.S-11) all Questions/Answers here

Leave a Comment