ভারতের সংবিধানের ভূমিকা
স্বাধীন দেশের সংবিধান রচিত হয় সেই দেশের আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, মূল্যবোধ আশাকঙ্কাকে কেন্দ্র করে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকটি দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূলসূত্র নিতে থাকে সংবিধানের মধ্যে।
ভারতীয় সংবিধানের ঠিক এমনই একখানে মূল্যবান পরিচয় পত্র যার মধ্যে রয়ে গেছে আমাদের আদর্শ, ভাবধারা, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, আশা আকাঙ্ক্ষা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের মতো বিষয়বস্তু।
আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবটি আরো মূল্যবান কারণ এটি যেন সমগ্র দলটির হৃদপিণ্ড বা হৃদযন্ত্র। সংবিধানের মধ্যে ফুটে উঠেছে সমগ্র জাতির জীবনের নৈতিক মূল্যবোধ, আদর্শ ও লক্ষ্য, যার সাফল্যের জন্য আমরা সমগ্র জাতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একমাত্র অনুকূল ও প্রয়োজনীয় ভিত্তিক জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায়ী পাড়ে উঠতো পুরুষকে সমর্থক করে তুলতে।
সংবিধানের প্রস্তাবনা
সংবিধান লাভের পর 1948 খ্রিস্টাব্দে বি. আর. আম্বেদকরের সভাপতিত্বে ভারতীয় সংবিধানের খসড়া রচিত হয়। এই খসড়া সংবিধানটি আলোচনার পর 1949 খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে নভেম্বর গণপরিষদ তা গ্রহণ করেন।
আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় যেমন আছে আমাদের ভারতবাসীর পথ থেকে জন্য পথ থেকে প্রতিশ্রুতি, তেমনি আছি নতুন এবং মহান ভারত গড়ার মৌলিক আদর্শ উদ্দেশ্য লক্ষ্য।
১৯৫০ সালের ২২ শে জানুয়ারি যে সংবিধান চালু করা হয়, ১৯৭৬ সালের ৪২ তম সংশোধনের সময় সংবিধানের মৌলিক প্রস্তাবনাটিতে আরো তিনটি শব্দ যুক্ত হয়।
সেই তিনটি শব্দ হলো। “সমাজতান্ত্রিক”, “ধর্মনিরপেক্ষ” এবং “সংহতি” এই শব্দগুলি যোগ করে ভারতবর্ষের সর্বভৌত, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতান্ত্রিক দেশ হিসাবে গণনা করা হয়েছে।
ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি বিভিন্নভাবে আলোচনা করা যায়, তবে কিন্তু আমরা ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি পয়েন্ট আকারে নিম্নে আলোচনা করিলাম-
পৃথিবীর বৃহত্তম জটিল সংবিধান
পৃথিবীর বৃহত্তম জটিল সংবিধান হলো একমাত্র ভারতের সংবিধান। কারণ এই সংবিধান রচনার সময় ৩৫৬ টি ধারা ছিল এবং ৮টি তপশিল ছিল। এবং এই সংবিধান সংশোধনের ফলে বর্তমানে ৪৫০ টি খাড়া এবং ১২টি তপশিলি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বেশি
তবে এই ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্র হলেও কিন্তু কেন্দ্রীয় ক্ষমতা সর্বদা বেশি। এখানে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য সরকারের চেয়ে বেশি ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ধর্মনিরপেক্ষ বা আদর্শ গ্রহণ
তবে আরো একটি ভালো দিক হলো ভারতের এই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ জাত পাত না দেখে সবাইকে সমান চোখে দেখার কথা বলা হয়েছে।
গণতন্ত্রের আদর্শ গ্রহণ
শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি ভারতীয় সংবিধানের গণতন্ত্রের আদর্শ গ্রহণের কথা কিন্তু সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষ সুযোগ সুবিধার সংরক্ষণ
বর্তমানে সমাজে যারা পিছিয়ে পড়ছে, সেই সকল মানুষদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা সংরক্ষণ এর কথা বলা হয়েছে এই ভারতীয় সংবিধানে।
এর একটি ছোট্ট উদাহরণ হল – আমরা বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি চাকরির ফরম ফিলাপ করতে গেলে সেখানে বয়সের ছাড় সহ বিভিন্ন দিক থেকে তপশিলি জাতি বেশি সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে।
আঞ্চলিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমন্বয়
সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশ। সংবিধান, কেন্দ্র ও রাজ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসারে ক্ষমতা বন্টন করা হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র হলেও রাজ্যের ও কেন্দ্রের ক্ষমতা দুটো সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা।
শুধু তাই নয় ভারতীয় সংবিধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ড এর সংবিধানের আদর্শে রচিত হয়েছে ভারতীয় সংবিধানের নাগরিকদের তিনটি অধিকার দেওয়া হয়েছে-
প্রথম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার।
দ্বিতীয় দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীন ক্ষমতা মত প্রকাশের ক্ষমতা এবং ধর্ম চরণ ও উপাদান প্রতিকার থাকবে।
তৃতীয়ত সবার সমান সুযোগ সুবিধা পাবে।