কোন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে সে দেশে উন্নয়ন ও অগ্রগতি। তবে শুধু এই সম্পদ থাকলেই চলবে না। তাকে উপযুক্ত ভাবে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষার।
বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা প্রতিটি দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িত। তাই কোন জাতিকে কর্ম মুখর করে তুলতে হলে, পৃথিবীর সমস্ত উন্নয়ন দেশের সঙ্গে তাল রেখে চলতে হলে, দেশকে একটি উন্নতশীল দেশের রূপান্তরিত করতে হলে, শিক্ষাকে উপাদান মুখে করতে হলে দরকার উন্নত পরিমাণের পরিকল্পনা ও কারিগরি ও ভিত্তিক মুখী শিক্ষার উন্নয়ন।
এই শিক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা কাজ করার ক্ষমতা, যে কোন কাজে প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, দায়িত্ববোধ, নিয়ম শৃঙ্খলা সম্বন্ধে সচেতনতা, নৈতিক বিকাশ এবং আত্মবিকাশ প্রকৃতির বিকাশ ঘটে।
ভারতের বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১ প্রাচীন যুগ
প্রাচীন ভারতের সাধারণ শিক্ষা মূল বিষয় হলেও গুরুর আশ্রমে বৃত্তিশিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। ক্ষত্রিয় ও বৈষমরা বৃত্তি শিক্ষা লাভ করত।
২ মধ্যযুগ
মধ্যযুগীয় বৃত্তি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছিল, যার নির্দেশন আজও আমাদের কাছে জলের মতো পরিষ্কার।
৩ ব্রিটিশ যুগ
ব্রিটিশ সরকার তাদের নিজেদের উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন মেটাতে ভারতের উচ্চ বৃত্তির শিক্ষার কয়েকটি সংস্থা স্থাপন করেন যথা – কলকাতা মেডিকেল কলেজ, মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি।
৪ উডের ডেসপ্যাচ
উডের ডেসপ্যাচ বৃত্তি শিক্ষার উপর প্রথম গুরুত্ব প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা ইত্যাদি শিক্ষার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করা হয়।
৫ হান্টার কমিশন
হান্টার কমিশনে মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে দুটি কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়। একটি হলো ‘A’ কোর্স এবং অপরটি হল ‘B’ কোর্স। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষক করার পর শিক্ষার্থীরা ‘B’ কোর্সের মাধ্যমে ব্যবহারিক জীবনের প্রতিযোগী বাস্তবসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করবে। ‘B’ বৃত্তি শিক্ষা এই সময় বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করতে পারেনি।
৬ সিমলা শিক্ষা সম্মেলন
সিমলা শিক্ষা সম্মেলন কৃষি, বাণিজ্য, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং কারিগরি প্রভৃতি বৃত্তি শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
৭ কার্জনের শিক্ষা নীতি
কার্জন ভারতীয় শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার জন্য বৃতিদানের রব্যবস্থা করেন। তার নির্দেশে চারুকলা বিদ্যালয় সংস্কার ও পুনরায় কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন হয়।
৮ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়। এই পরিষদ বঙ্গীয় কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন এছাড়াও যাদবপুর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণ করে। 1956 খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ লাভ করে।
৯ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়
দ্বিতীয় মহা যুদ্ধের সময় ভারতের শিল্পের উন্নতি ঘটে। ফলে বহু বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার শিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন হয়। তাই বহু শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
১০ সার্জেন্ট পরিকল্পনা
সার্জেন্ট পরিকল্পনার নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তি শিক্ষার প্রতি বিশেষ জোর দেওয়া হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়ে উচ্চ কারিগরি শিক্ষা চাহিদা মেটাতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চারটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন হয়।
১১ রাধাকৃষ্ণান কমিশন
রাধাকৃষ্ণান কমিশনে বৃত্তিমুখি ও কারিগরি শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।