ভারতীয় ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলির ঐতিহাসিক বিবর্তন উল্লেখ করো?

দেশীর রাজ্যগুলির ঐতিহাসিক বিবর্তন

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্রিটিশ শাসিত ভারতের পাশাপাশি অসংখ্য দেশে ও স্বাধীন রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। স্বদেশী শাসনগণ এই রাজ্যগুলি শাসন করতেন। ব্রিটিশ সরকার অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি, স্বত্ববিলোপ নীতি ও অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে এই দেশীয় রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশের প্রতি অনুগত হতে একপ্রকার বাধ্য করে। তাদের আনুগত্যের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতে নিজেদের শাসক কে নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা চালায়। মিজু সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে দেশীয় রাজ্যগুলি ঐতিহাসিক বিবর্তন লক্ষ্য করার যায়। যেমন-

১. ব্রিটিশ শাসনের রক্ষা প্রাচীন

পলাশীর যুদ্ধ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে এবং বক্সারের যুদ্ধ ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে জয় লাভের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এরপর তাদের দ্রুত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পোশাক ঘটে এবং তারা ভারতের শ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর তারা ভারতে দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিজেদের স্বার্থ গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। অনুগত এই দেশীয় রাজ্যগুলি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ শাসকের বারংবার রক্ষা প্রাচীরের মতো আগলে রাখা চেষ্টা করেছে।

২. ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য

ব্রিটিশদের প্রতি কোন কোন দেশীয় রাজ্যে খুব থাকলেও নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনই তারা প্রকাশ্যে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখাতো। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস প্রিন্স অফ ওয়েলস এর ভারত দর্শকে বয়কট করে। কিন্তু দেশের রাজ্যগুলি থাকে সদ্দার অভ্যর্থান জানি তার ভারত দর্শকের অর্থবহ গড়ে তোলা। এই রাজু কই ভারতীয় জাতীয়তাবাদের কথা ভুলে গিয়ে বিদেশি ইংরেজি তাবেদারি করেছে। ব্রিটিশ সরকারের প্রতি রাজ্য গুলি আনুগত্য অটুট রাখার জন্য সরকার দেশীয় রাজ্যগুলিতে গণতান্ত্রিক সংবিধানিক সংস্কারের কোন তাগিদ দেখায়।

৩. মহাবিদ্রোহ প্রতিরোধ ভূমিকা

ব্রিটিশ শাসিত ভারতের প্রায় সর্বোচ্চ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী মহাবিদ্রোহ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ সময় ভারতের কয়েকটি দেশীয় রাজ্যের শাসক তাদের সেনা সরবরাহ করে ইংরেজ সরকারকে মহাবিদ্রোহ দমন করতে যথেষ্ট সহায়তা করে। ব্রিটি সরকারের বিপদে কালে পাঞ্জাবের সৈন্যরা ব্রিটিশদের পক্ষে যুদ্ধ করে সরকারি সুবিধা করে দেয়।

৪. জাতীয় আন্দোলন দমনে উদ্যোগ

চারজনের পরবর্তী শাসক লর্ড মিন্টো ১৯০৫-১০ খ্রিস্টাব্দে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ ভারতের ভোটে চলা রাজনৈতিক পরিবর্তন থেকে আলাদা রেখে উদীয়মান জাতীয়তাবাদের প্রভাব থেকে সেখানকার মানুষদের দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময় বিভিন্ন দেশ ও রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়ায় এবং আন্দোলন দমনে সরকারকে সহায়তা করে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশে আন্দোলন ১৯০৫-১১খ্রিষ্টাব্দ, অসহযোগ আন্দোলন ১৯২০-২২ খ্রিস্টাব্দ প্রভৃতি সবাই দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের রাজ্যে ব্রিটিশ বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করে। শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন যে, “….. জাতীয়তাবাদের চ্যালেঞ্জে যখন উত্তরণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখন এসব ব্রিটিশভক্ত রাজ্য পুরুষেরাই ব্রিটিশ সবচাইতে বিশ্বস্ত মিত্র ছিলেন।

৫. প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে সরকারকে সহায়তা

মিন্টো দেশীয় রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা নীতি গ্রহণ করেন, তা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পাল্টে থাকে। যুদ্ধের সময় দেশীয় রাজ্যগুলির কাছ থেকে সহায়তা লাভের স্বার্থেই সরকার এসব রাজ্যগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার নীতি গ্রহণ করে। ফলে দেশীয় রাজ্যগুলি ও সরকারের যুদ্ধ তহবিল মুক্ত হস্তে দান করে এবং সামরিক সহায়তা দিয়ে তাদের খুশি করার চেষ্টা করে। হায়রাবাদে নিজাম ব্রিটিশ যুদ্ধ তহবিল ২৫ লক্ষ পাউন্ড দান করে। গোয়ালিয়ার এর রাজা বেশ কিছু সেনা ও একটি হাসপাতাল, জাহাজ দিয়ে ব্রিটিশদের সহায়তা করে। তুর্কি দের কাছ থেকে ব্রিটিশ হাইফা দখল করার সময় যোধপুরের আশ্বারোহি সেনার ইংরেজিতে যথেষ্ট সহায়তা করে।

৬. ১৯৩৭-এর নির্বাচনের প্রতিক্রিয়া

জাতীয় কংগ্রেসের ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে ব্যাপক সফলতা পায়। এর ফলে কংগ্রেস ইতিপূর্বে দেশীয় রাজ্যগুলিতে হস্তক্ষেপ না করার যে নীতি ঘোষণা করেছিল, তা ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে বাতিল করা হয়। all india state peoples conference দেশীয় রাজ্যগুলিতে যে গণ আন্দোলন শুরু করে কংগ্রেসের তাতে সমর্থন জানায়। এতে দেশীয় রাজ্যে শাসনকর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ব্রিহর দেশীয় রাজ্যগুলি ব্রিটিশদের সহায়তা দৃঢ় হাতে আন্দোলন দমনের উদ্যোগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি রেশিও রাজ্যগুলি কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে নিজেদের রাজ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করেন।

৭. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে সরকারকে সহায়তা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সরকারকে সহায়তা করে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। জয়পুরের মহারাজা ইংরেজদের পক্ষে জয়পুর সেনা দলের নেতৃত্বে দেন। বর্মার যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়ে বুন্দির মহারাজের ইংরেজদের কাছ থেকে মিলিটারি ক্রস পদক লাভ করেন।

উপসংহার

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের সময় দেশীয় রাজ্যগুলিকে স্বাধীন থাকার অথবা ভারত বা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকার দেয়া হয়। পার্বতী কালী অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতে এবং কিছু পাকিস্তানি অন্তর্ভুক্ত হয়। ভারতীয় ভৌগোলিক সীমায় অবস্থিত কিছু দেশীয় রাজ্য ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান না করে নিজেদেরকে পৃথক সত্তা বজায় রাখার চেষ্টা করলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরকার বল্লভ ভাই প্যাটেল দিও নীতির ফলে তারা ভারতে যোগ দিতে বাধ্য হয়। দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে শুধু নেপাল ও ভুটান ভারত বা পাকিস্তান কোন রাষ্ট্রে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment