প্রতীকধর্মীতার স্বরূপ
প্রতীক হল সাহিত্যের সংকেত দ্বারা ভাব প্রকাশের এক প্রকার পদ্ধতি বা রীতি। তাই অনেক সময়ই প্রতীকের সাহায্যে কবি ও সাহিত্যিকেরা তাদের বক্তব্যের ব্যঞ্জনা বা গঊঢ় ভাব প্রকাশের চেষ্টা করে থাকেন। বাংলা সাহিত্যে প্রতীকের ব্যবহার কমবেশি অনেক সাহিত্যিকেরা রচনাতেই লক্ষ্য করা যায়। প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের অনেক ছোটগল্পেই পথিকের সাহায্যে সংকেতময়তা বা ইঙ্গতময়তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়, যেখানে তার গল্পগুলি যথেষ্ট বিমূর্ত ভাবের হয়ে উঠেছে। সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোটগল্পেও এই বিশিষ্ট রীতির লক্ষিত হয়। বিশেষত তার ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটিতে প্রতীকের ইঙ্গতময়তা যথেষ্ট প্রকট।
গল্পের ভাব প্রকাশের কার্যকরী বৃদ্ধা চরিত্র
গল্পের পটভূমিতে লেখক অত্যন্ত সযত্নে স্থাপন করেন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে। তার সেই দুর্যোগের এক নামও নামগোত্রহীন অতি বৃদ্ধা চরিত্রকে হাজির করেন প্রতীক রূপে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, এই বৃদ্ধা লেখকের উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার হিসেবে গল্পে উপস্থিত। গল্পের ভাব প্রকাশের তার কার্যকরী ভূমিকা ও কম নয়।
বৃদ্ধা চরিত্রের ভূমিকা
লেখক উক্ত গল্পে আবহমান কালের চিরায়াত ভারতবর্ষের প্রতীক রূপে উপস্থিত করেন বৃদ্ধাকে। বৃদ্ধা যেন হিন্দু মুসলমান আত্মদ্বন্দ্বের জর্জরিতা ভারতবর্ষ, যার অস্তিত্বের সংকট নিয়ে দেশীয় মানুষদের কোন মাথাব্যথা নেই। সে যেন জীবন্মৃতা হয়ে আছে, এ নিয়েও কোন ইতিবাচক ভাবনা নেই। আছে শুধু টানাহ্যাঁচরা, মাটি কামড়াকামড়ি। হিন্দু মুসলমান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে এর প্রতীকী মাত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই গল্পের শেষে নড়ে বর্ষা বুড়িকে বলতে শোনা যায়-“আমি কি তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”
বর্তমান পরিস্থিতি
ধর্মের ভিত্তিতে একদা ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছিল। তাতেও ধর্মীয় দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি। দ্বন্দ্ব সংঘাত চলছেই লেখক যেন প্রতীকের মাধ্যমে এই বক্তব্যটি কে নতুন মাত্রা দিতে চেয়েছেন।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর