সূচনা : বিশ্বের উপনিবেশ গঠনকারী দেশগুলির মধ্যে সবার থেকে এগিয়ে ছিল ব্রিটিশরা। প্রায় একসঙ্গে উপনিবেশ প্রতিযোগিতা শুরু করলে পর্তুগাল, স্পেন, হল্যান্ড এবং ফ্রান্সের তুলনায় বৃটেনের অনেক গুণ এগিয়ে যায়। শুধু তাই নয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত সময়কাল ধরে বিচার করলে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি দুজনের উপনিবেশের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। তাই সদাশি খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের সময়কাল উপনিবেশে বিস্তারের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের একাধিপত্যর যুগ নাম চিহ্নিত হয়।
ব্রিটিশের উপনিবেশ বিস্তার
১. অস্ট্রেলিয়া
সপ্তদশ শতকের ওলন্দাজ নাবিক ও আবিষ্কারকদের প্রচেষ্টায় অস্ট্রেলিয়া জলপথে অনুপ্রবেশের ধারণা তৈরি হয়। যদিও সে সময় অস্ট্রেলিয়ার উপনিবেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে তেমনভাবে কেউ সাফল্য পায়নি। অষ্টাদশ শতকের শেষ বাদে ব্রিটিশ নাবিক ও আবিষ্কার ক্যাপ্টেন কুক অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলবর্তি অঞ্চলে সন্ধান পান। তিনি এখানকার বোটানি হ্রদ-এ সর্বপ্রথম ব্রিটিশ পতাকা উড়ান। পরবর্তীকালে গর্ভনর ম্যাকিয়ার এর প্রচেষ্টায় অস্ট্রেলিয়া রাস্তা, সেতু, কৃষি ও পশুচারণ ক্ষেত্রে এবং চর্চা তৈরি হয়। এভাবে অস্ট্রেলিয়াকে বাষ্পযোগী করে তুলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভুক্ত করা হয়।
২. নিউজিল্যান্ড
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ নাবিক ও আবিষ্কারক ক্যাপ্টেন কুক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া ও নিউজিল্যান্ড আবিষ্কার করেন। একাধিকবার সমুদ্র যাত্রা করে কুক এই সফলতা পান। পরবর্তীকালে ওয়েটফিল্ডের নেতৃত্বে বহু ইংরেজ এখানে এসে বসবাস শুরু করে। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দের নিউজিল্যান্ড ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভুক্ত হয়।
৩. কানাডা
কানাডায় প্রথম দিকে ফরাসিদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। এখানকার সর্ববৃহৎ অঞ্চল কুইক বেকের বেশিরভাগ অধিবাসী ছিল ফরাসি। ফরাসিদের দুর্বলতার সুযোগ এখানে ব্রিটিশদের অনুপ্রবেশ ঘটে। বল প্রয়োগের মাধ্যমে কুইক ব্যাগ অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত (১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে) করা হয়। এদিকে কানাডা যাতে মার্কিন প্রভাবাধীন হয়ে না পড়ে তার জন্য বড়লাট নর্থ ‘কুইকবেক অ্যাক্ট) ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে পাস করান। এই আইন পাস এর মাধ্যমে কুইক ব্যাগ বাসিকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা ছাড়াও বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। তবুও কানাডায় বসবাসকারী ব্রিটিশ ও ফরাসিদের মধ্যে বিরোধ লেগে থাকত। এর সুযোগ নিয়ে আমেরিকা সেখানে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, এই ভয়ে ব্রিটিশ সরকার দ্বিতীয় কানাডা অ্যাক্ট পাস করান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কানাডা স্থায়ী বাসিন্দারা বিদ্রোহ হয়ে ওঠে এবং ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বায়ত্ত শাসনের অধিকারী লাভ করে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে।
৪. ভারত
বিশ্বের ব্রিটিশদের সমস্ত উপনিবেশ গুলির মধ্যে ভারতবর্ষের ব্রিটিশ উপনিবেশ টি ছিল ইংরেজ জাতির কাছে সর্বাধিক মূল্যবান এবং লাভজনক এক উপনিবেশ। প্রায় ২০০ বছর ধরে ব্রিটিশরা ভারতের ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ চালায়। পলাশীর যুদ্ধ ও বক্সারের জয়লাভ করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের ইংরেজদের কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তী ১০০ বছর ধরে এদেশের কোম্পানি কর্তৃক বাজায় থাকে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর বণিক কোম্পানির হাতে ভারতের শাসনভার রাখা নিরাপদ নয় বিবেচনা করে ভারতের শাসনভার ইংল্যান্ডের রানী ও পার্লামেন্টের হাতে অর্পণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বর্ষকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুই আলাদা রাষ্ট্রে ভাগ করে স্বাধীনতা দেয়া হয়।
৫. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সিংহলে ওলন্দাজ বণিক শক্তিকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে ব্রিটিশ নিজেদের কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি ব্রিটিশের ব্রাহ্মণ দেশকে ও নিজের অধিকারে আনে। এছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালাক্কা এবং ফিজি দ্বীপপুঞ্জ দখল করে ব্রিটিশ তার উপনিবেশের বিস্তার ঘটায়।
৬. দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘কেপ-অফ-গুড-হোপ’ -এই ইংরেজরা প্রথম উপনিবেশ গড়ে তোলে। পরবর্তীকালে ওলন্দাজের কাজ থেকে কেপ কলোনি কেড়ে নিয়ে তারা উত্তর দিকের নাটাল, অরেঞ্জ এবং ট্রান্সভাল অঞ্চল গুলি দখল নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অঞ্চলটিকে ঐক্যবদ্ধ করে ব্রিটিশরা ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা গঠন করেন ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তী সময়ে উত্তর মিশর, সুদান, উগান্ডা, বেচুয়ানাল্যান্ড, রোড এশিয়া ইত্যাদি অঞ্চলের উপর england নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব আফ্রিকা ছাড়াও জাম্বিয়া, সিয়েরা লিয়ন, গোল্ড কোস্ট, নাইজেরিয়া ও সোমালিল্যান্ডের একাংশ ও ইংল্যান্ডের অধিকারে আসে।
মন্তব্য
উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল। ছোট একটি দেশে ব্রিটেন যেভাবে বৃষ্টির প্রায় সমস্ত অঞ্চলের পৌঁছে গিয়ে নিজের উপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, তাদের অন্যান্য উপনিবেশিক দেশগুলি ও অনুপ্রাণিত হয়েছিল। সবচাইতে বড় কথা উপনিবেশ বিস্তারের মাধ্যমে ব্রিটিশ জাতি হিসেবে নিজেদের সংস্কৃতিকে বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। এর উদাহরণ হিসেবে আজও আমরা দেখি ইংরেজির ভাষা ও সাহিত্য বিশ্বে অন্যান্য ভাষা ও সাহিত্যের তুলনায় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা ও মানবতা পেয়েছে। বলা বা হল সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ কোন যুগেই সমর্থনযোগ্য নয়।