ভূমিকা
নাট্যকারের কৌতুক প্রবণতা কখনো কখনো নাড়টা রচনা কে নিঃসন্দেহে রসোত্তীর্ণ করে তোলে। প্রখ্যাত নট-নাট্যকার-নাট্যনির্দেশক শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকটিতে তার কৌতুক বোধ সুচারু রূপে প্রকাশিত হয়ে রচনাটিকে চরম উৎকর্ষতা দান করেছে। এই কৌতুক প্রবণতা নাটকের চিত্রত্রয়ের সংলাপে ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’র মতো উদ্ভাসিত হয়ে পাঠক ও দর্শককে চমকিত করে।
নাট্য-উক্তির মধ্যে কৌতুক
নাটকের শুরুতে শম্ভু চরিত্রটি জানান ; নাট্যশাস্ত্র মতে নাটকের নাম ‘বিভাব’ বটে, তবে নাম হওয়া উচিত ছিল ‘অভাব নাটক’ । এ উক্তিতে প্রচ্ছন্ন কৌতুক ছড়িয়ে আছে। শম্ভু মিত্রের ‘বহুরূপী’র তখন আর্থিক দুরবস্থা চূড়ান্ত। সকৌতুককে তাই তিনি জানান-“কারণ দুরন্ত অভাব থেকেই এর জন্ম।” বাঙালি ইংরেজি শিক্ষিত দর্শক নাটক যতটা বোঝে, তার থেকে বেশি বোঝে সাহেবিয়ানা। তাই এদেশে নিজস্ব কিছুকে স্বীকার করতে তাদের সাহেব নির্ভরতা পরম কৌতুক সংলাপে স্থির হয় – “তবে হ্যাঁ, মানতে পারে, যদি সাহেবে মানে। যেমন রবিঠাকুরকে মেনে ছিলেন।” রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গে কৌতুকের মাত্রা যেন এখানে গগন ছোঁয়া হয়ে ওঠে।
সংলাপ
‘লভ সিন’ নাটকের পপুলার করতে পারে। অমরের জিজ্ঞাসা – “লভ সিনটা আবার কি?” এ যে প্রেমের অভিনয়, বৌদি তা বলে দিল অমর সকৌতুকে বলে -“হ্যাঁ, হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি লভ সিন-লভ সিন। বায়োস্কোপে দেখেছি।” বলা বাহুল্য কামার্শিয়াল সিনেমায় লভ সিনের বাড়াবাড়ি রকমের আধিক্য নিয়েই এই ব্যঙ্গোক্তি। আমাকে পুলিশ সাজাতে শম্ভু বলেন -“হ্যাঁ, হ্যাঁ, ৩২ ইঞ্চি বুক হলেই পুলিশ হওয়া যায় না।” মমর তৎক্ষণাৎ জানান- “আমার ৩৩ ইঞ্চি।” কৌতুক মাখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে শম্ভুর উত্তর- “ওঃ তাহলে তুমি তো একেবারে সার্জেন্ট হবে না।”
কৌতুকপ্রবণতা
‘বিভাব’ নাটকটি ক্ষুদ্রকায়। অনতি দীর্ঘ সংলাপের ফাঁকে ফাঁকে তবুও নাট্যকার অসীম দক্ষতায় এর মধ্যে গেঁথে দেন কৌতুকের অজস্র লক্ষণ। জানিয়ে নাটকটি হয়ে ওঠে কৌতুক প্রবণতার টলটলে প্রবাহ।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর