বাংলা গানের ধারায় চর্যাপদের ভূমিকা আলোচনা করো?

চার্জার বর্ণনা

বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের আদিতম নির্দেশন চর্যাপদ আসলে মহাজানপন্থী বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের ধর্ম সাধন গান। দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে কোন এক সময় রচিত চর্চার এই পদগুলিতে আলোর-আঁধারি ভাষায় ধর্ম সাধন কথা বলা হয়েছে এবং যা প্রচারিত হয়েছে গানের মাধ্যমে। চার্জার পদ গুলিতে বিভিন্ন রাগের উল্লেখ রয়েছে সুস্পষ্ঠভাবে। বাংলা ভাষার ৪৬ টি সম্পূর্ণ এবং একটি পদের অর্ধেক আবিষ্কৃত হলেও চার্জার মোট পদ সংখ্যা ছিল ৫১ টি। এই পদগুলি রচনা করেছিলেন ২৩ জন পদকর্তা। লুইপা, কাহ্নপা, ভুসুকুপা, ঢেন্ঢনপা, কুক্কুরীপা প্রবুক বৈধ সহজিয়া, সিদ্ধাচার্যরা চার্জার গান রচনায় উল্লেখযোগ্য নাম।

চর্যায় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার

‘অষ্টাদশী চর্য্যা কুক্কুরী পাএ গাইঊ’- কুক্কুরীপা-এর এই উল্লেখ থেকেও প্রমাণিত হয় যে চর্যাপদ গীতি হত। চর্যাপদ এর বিভিন্ন পদে অরু, গউর্জরঈ, পট মঞ্জুরী, দেবক্রি, দেশাখ, কামোদ, রামক্রি, ভৈরবী, মল্লারী, মালসী, বঙ্গলা ইত্যাদি রাগের উল্লেখ আছে। চার্জার যুগে সংগীতের যে ছয়টি অঙ্গ ছিল সেগুলি হল- স্বর বিরুদ (স্তুতিবাচক), পদ, তেনক (মঙ্গলবাচক), পাট (তালের বোল উচ্চারণ) এবং তাল। চর্যাপদের পদগুলিতে তালের উল্লেখ না থাকলেও বাদ্যযন্ত্র হিসেবে পটহ বাট ঢোল, মাদল, কসাল, ডুমুর, বিনা, একতারা প্রভৃতি ব্যবহারে যে প্রচলিত ছিল, তা পদগুলি থেকে জানা যায়।

বাংলা সংগীতের আদিমতম নির্দেশন

বাংলা ভাষা প্রথম সাহিত্য রূপ লাভ করে চর্যাপদ। বাংলা ভাষার সংগীত চর্চার আদিম পূর্বে তাই চর্যাপদ এর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। চার্জার রাগরাগিণী পরবর্তীতে মার্গসংগীতে ব্যবহৃত হয়েছে। পদ কর্তাগণ চর্জা গানে যে ছন্দের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন তা অনুসৃত হয়েছে জয়দেবের ‘গীতি গোবিন্দম’ এ কিংবা পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে। চর্যা গান বাংলা সংগীতের আদিমতম নির্দেশন হিসেবে যথেষ্ট গুরুত্ব দাবি রাখে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment