অধ্যাত্মকসাধন অঙ্গ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মধ্যযুগের উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য কাব্য মূলক মঙ্গল গীতি হিসেবে কীর্তন সর্বোৎকৃষ্ট। কীর্তি বা প্রশংসা সূচক গানকে কীর্তন গান বলা হয়। বলা বাহুল্য, ঈশ্বরের রূপ ও গুণের যশ প্রকাশের জন্যই কীর্তন গাওয়া হয়ে থাকে। শ্রীকৃষ্ণ কে কেন্দ্র করে এই কীর্তন গানের আবির্ভাব। এই গানগুলি সু প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে শ্রেষ্ঠতম অধ্যাত্মকসাধন অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের মূলত চৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) আবির্ভাবের পর এবং বৈষ্ণব পদাবলী প্রভাবে কীর্তন গানের প্রচলন হয়। নৃত্য সহযোগ বাদ্যের সমাহারে গীতি ও কীর্তন গান।
কীর্তন গানের শ্রেণীবিভাগ
কথিত আছে শ্রীচৈতন্যদেবের স্বয়ং কীর্তন কে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন-নাম কীর্তন বা সংকীর্তন বা লীলা কীর্তন নামকীর্তনে মূলত কৃষ্ণের নাম সংকীর্তন করা হয়, লীলা কীর্তনের রাধা কৃষ্ণ প্রেমের মাধুর্য ভাব গভীরতা সহকারে প্রকাশিত হয়।
কীর্তন গানের অঙ্গ
কীর্তনে বহু প্রকার তাল ও মাত্রার সমাবেশ লক্ষণ করা যায়। দশকুশী, বাঁশ পাহাড়ি, ধামালি, তেওট, অষ্টমান প্রভৃতি তার ব্যবহার করা হয়ে থাকে বর্তমানে উচ্চাঙ্গ কীর্তন। কামোদ, গৌরী, শ্রী, টোড়ী, কানাড়া, ভূপালি, মল্লার, আশাবাদী, ভৈরবী, বসন, পটমঞ্জউরই, বেহাগ, বসন্ত বাহার, ইমন কল্যাণ প্রভৃতি ভারতীয় শাস্ত্রীয় রাগরাগিনীর আশ্রয়ো কীর্তন গান প্রচারিত হতে দেখা যায়। কীর্তনের পাঁচটি অঙ্গ ; যথা- কথা, দোঁহা, আখর, তুক ও ছুট। কীর্তন গানের ধারাটি আজও বহমান রয়েছে। বিভিন্ন সময় কীর্তন গানের জনপ্রিয়তা লাভ করেছে-নন্দকিশোর দাস, সন্তোষ বৈদ্য, রাধারানী, কৃষ্ণচন্দ্র দে, ললিতা দাসী, নিমাই ভারতী, সুবল দাস বৈরাগ্য প্রমুখরা। বাঙালির হৃদয়া বেগের গভীরতম প্রকাশ কীর্তন গানকে স্বতন্ত্র চিহ্নিত করেছেন।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর