প্রেক্ষাপট
অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতি অবহেলিত প্রেক্ষাপটে জন্ম লাভ করে কবি গান। যখন নগর কলকাতায় বিলাসব্যসনের মাত্রা চলে গিয়েছিল, তখন অশিক্ষিত তথাকথিত অভিজাত সম্প্রদায়ের মনোরঞ্জনের জন্য আবির্ভাব ঘটেছিল কবিওলাদের। রবীন্দ্রনাথ ‘লোকো সাহিত্য’ গ্রন্থের ‘কবি সংগীত’ অধ্যায় লিখেছেন- “কবি ওলাদের গানের সাহিত্যরসের সৃষ্টি অপেক্ষা ক্ষণিক উত্তেজনা-উদ্রেকই প্রধান লক্ষ্য।” কোভিদ অর্থে এখানে অশিক্ষিত স্বভাব পটু কবি-যাদের শিক্ষা দীক্ষা বিশেষ না থাকলেও প্রকৃতি দত্ত শক্তির বলে সবাই দাঁড়িয়ে তৎক্ষণাৎ মুখে মুখে গান রচনা করে তাতে সুসংযোগ করে গাইতে পারতেন।
কবি গানের বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নরূপ-
(১) মধ্যযুগের পালাগানের আদলে গঠিত একটি বিশেষ সময় গত রুচির পরিপ্রেক্ষিতে কবি গান হলো সংক্ষিপ্ত অথচ সমষ্টিবদ্ধ রচনা।
(২) কবিগান চাপানউতোরনির্ভর, তীব্র নাটকীয়তার পরিপূর্ণ। ঘাত প্রতিঘাত, উক্তি-প্রত্যুক্তির মধ্যে দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করে পরাস্ত করায় কবিদের লক্ষ্য।
(৩) কবি গানের মুখ্য বিষয় প্রত্যক্ষ প্রার্থীব জীবনের কামনা বাসনা পূর্ণ রাধা কৃষ্ণের প্রেম।
(৪) কবি গানের পর্যায়ে গুলি হল যথাক্রমে-গুরুদেবের গীত, সুখী সংবাদ, বিরহ, খেউড়। আবার অন্য মতে মালসি বা ভবানী বিষয়ক সুখী সংবাদ, গোষ্ঠ ও লহর।
(৫) কবি গানের মূলে রয়েছে একটা সামাজিক দাবি। অষ্টাদশ শতকের শেষের পর্বের ৪০ বছরের অস্থির সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত কবি গান গুলি বাংলা সাহিত্য কিংবা গানের মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের মধ্যে সেতুবন্ধন এর কাজ করেছে।
কবিগান এর অর্থাৎ কবি ওলাদের আদিগুরু হিসেবে ধরা হয় গোঁজার গুঁইকে । এছাড়া নিতাই দাস বৈরাগী, রাম বসু, হরু ঠাকুর, ভোলা ময়রা, শ্রীধর কথক, রূপচাঁদ পক্ষী, নিধুবাবু, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি প্রমুখ বিশিষ্ট কবি ওলারাও ছিলেন।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর