বাংলা গানের ইতিহাসে পাঁচালী গানের ভূমিকা আলোচনা করো?

‘পাঁচালী’ শব্দের উৎপত্তি

সংস্কৃত ‘পাঞ্চালিকা’ থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে ‘পাঁচালী’ শব্দটি। এটি মূলত পয়ার ছন্দে রচিত গান। কোথাও আবার পাঁচালী শব্দটি ‘পাদচাউন’ বা ‘পাবালি’ নামে প্রচলিত। প্রাচীনকাল থেকে বাংলা গানের এই ধারাটি সমাজে প্রচলিত এবং জনপ্রিয়। ষোড়শ শতকের শেষে দিকে রামায়ণ পাঁচালী গাওয়া হতো। ষোড়শ সপ্তদশ শতকে রামলীলা বিষয়কে পাঁচালী রচিত হতে শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে গঙ্গা তীরবর্তী পল্লী অঞ্চলে যে বিভিন্ন ঢঙের গীতি পদ্ধতির প্রচলিত হয়, পাঁচালী তার মধ্যে অন্যতম।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা

পাঁচালীতে গায়ক অঙ্গভঙ্গি করে এবং পাত্র পাত্রীর সাজ-সজ্জার মাধ্যমে হাস্যরসের অবতরণ করা হয়। অনেকের মনে করেন পাঁচালী থেকে যাত্রা গানের উদ্ভব হয়েছে। পূরবী শতাব্দীর কলকাতা কবিগান, আখড়াই, হাফ আখড়াই, কিংবা টপার প্রভাবে প্রাচীন পাঁচালী নতুন রূপ নেয়। পাঁচালীর মধ্যে মেশে উক্তি- প্রত্যুক্তির ঢং। আধুনিককালে পাঁচালী গানের অন্যতম জনপ্রিয় নাম দাশরথী রায় (১৮০৭-৫৫) । গঙ্গা নারায়ণ নস্করের নাম করা হয়। কেবল শিক্ষিত মানুষের মধ্যে নয়, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত আপামর জনসাধারণ দাশরথি রায়ের পাঁচালী গান কে আপন করে নিয়েছিল।

কেবল শ্রীকৃষ্ণ কিংবা অন্যান্য পৌরাণিক বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক বিষয় অবলম্বনে তিনি পাঁচালী রচনা করেছিলেন। ‘বিধবা বিবাহ পালা’ পাঁচালীতে বিদ্যাসাগরের কটাক্ষ করেছেন তিনি। পরবর্তীকালে ঠাকুরদাস দত্ত, রসিক চন্দ্র রায়, ব্রজমোহন রায়, আনন্দ শিরোমনি প্রমুখ বাংলাদেশ পাঁচালী ধারণাটিকে প্রচলিত ও প্রবাহিত রেখেছিলেন। সময়ের প্রয়োজনে উদ্ভূত এই ধারণাটি বাংলা গানের ইতিহাসে তাই যথেষ্ট গুরুত্বের দাবি রাখে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment