বহুমুখী বহু উদ্দেশ্য সাধক বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বা সুপারিশ

মুদালিয়র কমিশন (1992 – 1953) মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্যে, সংগঠনিক কাঠামো, সংগঠন, পাঠক্রম, শিখন পদ্ধতি, পরীক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষক শিক্ষণ, প্রশাসন প্রভৃতি নানা বিষয় সম্পর্কে নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেন। এই সুপারিশ গুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল বহুমুখী বিদ্যালয়। স্থাপন।

বহুমুখী বহু উদ্দেশ্য সাধক বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বা সুপারিশ

শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা, রুচি সামর্থ, চাহিদা অনুসারে শিক্ষার সুযোগ দেয়ার জন্য বহুমুখী বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

উদ্দেশ্য বা সুপারিশ

১ বহুমুখী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাসঙ্গ থেকে শিক্ষার্থীদের কমানো।

২ রুচি ও সামর্থ্য অনুসারে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া।

৩ স্বতন্ত্রভাবে অর্থাৎ বহুমুখী বিদ্যালয় সঙ্গে বহু সংখ্যক কারিগরি বিদ্যালয় পরিচালনা করা।

৪ শিল্প কারখানাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ রেখে কারিগরি বিদ্যালয় গুলি পরিচালনা করা।

৫ শিল্প কেন্দ্রগুলিতে শিক্ষার্থীরা যাতে ব্যবহারিক শিক্ষা অর্থাৎ হাতে কলমে শিখতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় হলো বাধ্যতামূলক আইন তৈরি করা।

৬ ভারতের সব রাজ্যে গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলিতে কৃষি শিক্ষার বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, এবং পশুপালন, কুটির শিল্প, হল ফুলের উদ্যান রচনার বিষয় বিদ্যালয় পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা।

সুতরাং মুদালিয়র কমিশনের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। এই সুপারিশের উপর ভিত্তি করে বর্তমানে বহুমুখী বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কারণ আমরা বর্তমানের ভিতর গুলিতে সাধারণ ধরনের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা দেখতে পাই।

অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা তার নিজের চাহিদা, সামর্থ, রুচি অনুযায়ী শিক্ষালাভ করতে পারে।

পাঠ্য পুস্তক

কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত পার্থক্য রচনা ও প্রকাশনা উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এবং উন্নত মানের পার্থক্য রচনা ও প্রকাশনার জন্য উচ্চ ক্ষমতা বিশিষ্ট পাঠ্য পুস্তক কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন।

শিখন পদ্ধতি

মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার যে গতানুগতিক শিখন পদ্ধতি প্রচলিত আছে তা বর্জন করে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিখন পদ্ধতির প্রচলন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানসম্মত নতুন শিখন পদ্ধতিতে নিজেদের আগ্রহ এবং নিজেদের চেষ্টায় জ্ঞান আহরণ করবে।

মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষা পদ্ধতি হবে গতিশীল, সক্রিয় এবং বাস্তব জীবনের উপযোগী।

ভাষা শিক্ষা

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের জন্য ত্রিভাষা সূত্র সুপারিশ করেছেন। এই তিনটি ভাষা হবে – আঞ্চলিক ভাষা বা মাতৃভাষা, হিন্দি ভাষা এবং অপরটি হবে ইংরেজি ভাষা।

শারীর শিক্ষা

কমিশন বলেছেন শিক্ষার্থীদের কল্যাণের বিশেষ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দৈহিক বিকাশ। এই কারণে দেশের প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। এই এই কর্মসূত্রটিকে করার জন্য কেন্দ্রীয় রাজ্য স্তরের এক একটি করে শারীরিক শিক্ষা সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছেন।

পরীক্ষা সংস্কার

কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে পরীক্ষার ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীর অগ্রগতির মূল্যায়ন শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরীক্ষাটিকে নৈব্যক্তিক করার জন্য রচনা মূলক পরীক্ষার পরিবর্তে নৈব্যক্তিক অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধা

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দানের সুপারিশ করেছেন- এবং বিদ্যালয়ে শিখনের মান বৃদ্ধির জন্য গৃহ শিক্ষকতা নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সমালোচনা

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষাকে জীবন কেন্দ্রিক, প্রগতিশীল ও কর্মভিত্তিক করার উপর করে সুপারিশ করেছেন। এই সুপারিশ গুলিতে যথেষ্ট প্রগতিশীল চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটলেও এতে অনেক বড় পরিমাণের ত্রুটি রয়েছে।

সুপারিশের সীমাবদ্ধতা

শুধু তাই নয় মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের বিভিন্ন ভালো দিক থাকলেও এখানে কিন্তু অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

১ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন (1952 – 1953) মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য নির্দেশ করেছেন ঠিকই কিন্তু এই সুপারিদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় নেই.

2 কমিশন চরিত্র গঠন, ব্যক্তির বৈষম্য, গণতন্ত্র ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর লক্ষ্য রেখে বহুমুখী পাঠক্রমের প্রবর্তনের সুপারিশ করেছেন.

৩ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের কাঠামো সম্পর্কিত সুপারিস তেমন পরিষ্কার ছিল না।

৪ সংখ্যক বহুমুখী বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করলেও অধিকাংশ বহুমুখী বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র কলা ও বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

৫ বহুমুখী বিদ্যালয়গুলিতে পাঠ্য প্রবাহ নির্বাচনের ব্যাপারে নির্দেশনা ও পরামর্শ দানের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব থাকায় বিশ্বের সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের (1952 – 1953) সুপারিশের কিছু ত্রুটি থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে রূপান্তর সৃষ্টি করেছে তার মাধ্যমে আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে

তাই নিঃসন্দেহে বলতে পারি ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনায় এই কমিশনের গুরুত্ব অপরিসীম।

দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment