বয়স্ক শিক্ষার ধীর অগ্রগতির কারণ সমূহ উল্লেখ করে। বয়স্ক শিক্ষার আশানুরূপ সফলতা অর্জনে ব্যর্থতার কারণ গুলি লেখো।

প্রাক-স্বাধীনতা সময় থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ৭১ বছর পরেও বয়স্ক শিক্ষার জন্য যেসকল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তা তেমনভাবে ফলপ্রসূ হয়নি।

বয়স্কশিক্ষার ধীর অগ্রগতির কারণ

(১) অর্থ ও আগ্রহের অভাব: বয়স্ক শিক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি অর্থের বরাদ্দের ক্ষেত্রে কার্পণ্য মনোভাব লক্ষিত হয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আগ্রহের যথেষ্ট অভাব দেখা যায়।

(২) নেতৃত্বের ও অভিজ্ঞতার অভাব : এই কর্মসূচির রূপদানের জন্য উপযুক্ত নেতৃত্বের যথেষ্ট অভাব ছিল, সেইসঙ্গে তৃণমূল স্তরের কর্মী মানুষদের সংকীর্ণ অভিজ্ঞতা কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

(৩) সর্বজনীন শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা এবং শিক্ষক জনিত ব্যর্থতা : সংবিধানের নির্দেশানুযায়ী ৬-১৪ বছর বয়স্ক সকল শিশুর জন্য অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা সর্বোতভাবে প্রচলন করা যায়নি। এছাড়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বয়স্ক শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি। বয়স্ক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের শিক্ষা বিভাগ ও উন্নয়ন বিভাগের নির্দেশ মেনে চলতে হয়। যা দ্বন্দ্বমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করে।

(৪) সরকারি ও বেসরকারি ঔদাসীন্যতা এবং সমন্বয়ের অভাব : সরকারি ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ ছাড়া এই কর্মসূচি রূপায়ণে উভয় পক্ষের যথেষ্ট উদাসীন মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। যেটুকু অর্থ এই কর্মসূচিতে বরাদ্দ তা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় না।

(৫) প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ এবং পাঠ্যপুস্তকের অভাব : বয়স্কদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত গ্রন্থাগার, শিক্ষা সহায়ক উপকরণের অভাব এবং নব্য সাক্ষর এর উপযোগী পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের অনাগ্রহ দেখা যায়।

(৬) কুসংস্কার ও মহিলাদের অনাগ্রহ : কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহের অভাব রয়েছে, যা বয়স্ক শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটায়। এ ছাড়া বয়স্ক শিক্ষায় মহিলারা সময় দিতে পারে না যেহেতু তারা দৈনন্দিন গৃহকর্মের সমস্তরকম কাজে ব্যস্ত থাকে। সমাজে জাতপাত, কুসংস্কার আরও একটি বড়াে বাধা। কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ একসঙ্গে লেখাপড়া করতে অনীহা প্রকাশ করে। গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে কুসংস্কার সবচেয়ে বড় অন্তরায়।

(৭) সুবিধাভোগীদের পক্ষ থেকে বাধা : এদের পক্ষ থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। জমিদার শ্রেণী, কারখানার মালিক, মহাজন এটা নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে জনগণকে শোষণ করে।

(৮) কলকারখানার মালিক কর্তৃক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি : শিল্প ও কলকারখানার মালিকরা তার শ্রমিকদের জন্য কোনাে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেননি।

(৯) আংশিক সময়ের শিক্ষা রকম সুযোগ এবং প্রবহমান শিক্ষার অভাব : আংশিক সময়ের শিক্ষা বা করেসপন্ডেন্স কোর্স এর সুযোগ কম বা কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে নেই।

(১০) সাক্ষরতার সঙ্গে জীবিকা অর্জনের সমন্বয়ের অভাব : বয়স্ক শিক্ষার সঙ্গে জীবিকা অর্জনের সমন্বয়ের অভাব তার্থাৎ লিখন, পঠন, সাধারণ গণিত শিখনের সঙ্গে জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত বয়স্করা কোনাে মিল খুঁজে পায় না। তাই তারা এই শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব অনুভব করে না। এই সকল কারণে বয়স্ক শিক্ষা আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

(১১) বিধিবদ্ধ স্কুল ও কলেজের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব : বিধিবদ্ধ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার সঙ্গে বয়স্কশিক্ষার বিশেষ কোনাে যােগাযােগ থাকে না।

সুতরাং শিক্ষা ছাড়া গণতন্ত্রের জাগরণ সম্ভব নয়। তাই যারা শিক্ষার আলো নেই, বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য শিক্ষা, মূল্যবোধের শিক্ষা, অবসর বিনোদনের শিক্ষা, গণতন্ত্রের শিক্ষা ইত্যাদি দিতে হবে।

এইরকম Question answer পাওয়ার জন্য আমাদের website visit করুন

দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষা বিজ্ঞানের(education) সব প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment