প্রসঙ্গ
উদ্ধৃতিংশটি প্রখ্যাত কথা সাহিত্য সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্প থেকে নেয়া হয়েছে। যেখানে রাখা যায় রাঢ়বঙ্গের পৌষে এক সুতীব্র অকাল দুর্যোগে কিছু আপাত কর্মহীন মানুষজন ছোট বাজারের এক চা দোকানে আড্ডার পরিবেশ ঘনিয়ে তুলেছিল। তখন সেখানে আসে এক থুথুড়ে কুঁজো ভিকিরি বুড়ি। রাতের সে আশ্রয় নেয় এক বট গাছ তলায়। দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পরের দিন গ্রামবাসীরা আবিষ্কার করে বুড়ির নিঃসাড় দেহ এবং সকলে ভেবে নেয় যে সে মৃত। তার দেহকে হিন্দুজনেরা সরকারি প্রতিনিধি চৌকিদারের পরামর্শে বাসের চ্যাংদোলা করে নদীর শুকনো চড়াই ফেলে দিয়ে আসে। ঐদিনই বিকেলে কিছু মুসলিম ওই একই চ্যাংদোলায় দেহটিকে আবার বাজারে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাদের বক্তব্য বুড়ি মুসলমান, তাকে কবর দিতে হবে। এই নিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বেধে গেল।
বচসার কারণ
বুড়ি যে মুসলমানই, তার স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে বেশি সময় লাগে না। অনেকেই জানায়, বুড়ি বিড়বিড় করে ‘আল্লা’ বা ‘বিসমিল্লা’ বলছিল তারা শুনেছে। খোদ গায়ের মোল্লাসাহেব অকাট্য শপথ বলেন, ভোরের নামাজ ছেড়ে তিনি যখন বাস ধরতে যাচ্ছিলেন, তখন মারা যাওয়ার সময় তিনি বুড়িকে স্পষ্ট কমলা পড়তে শুনেছেন। ব্যাপারটাকে ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দিয়ে ভটচাজমশাই বলেন-তিনি ওই একই সময় বাস ধরতে যাওয়ার পথে বুড়িকে স্পষ্ট বলতে শুনেছেন, ‘শ্রী হরি শ্রী হরি শ্রী হরি’। মোল্লা সাহেবের স্বপক্ষে সাক্ষ্য দিতে ফজলু শেখ বলে-‘আমি স্বকর্ণে শুনেছি, বুড়ি লাইলাহ ইল্লাল্লা বলেছে !’ আর ভটচাজমশাই স্বপক্ষে নকড়ি নাপিত দিব্যি করে বলে-বুড়ি নাকি আপন মনে : হরিবোল, হরিবোল !’ বলছিল। এরপর নিবারণ বাগদি যদি চেঁচিয়ে বলে ‘মিথ্যে’ তো করিম ফরাজি আরো চেঁচিয়ে বলে ‘খবরদার’ । পরিষ্কার বোঝা যায়, বুড়ির কণ্ঠে কিছু শোনার থেকেও বড় বিষয় হল-বুড়ি দেহ দখল করে নিজ নিজ ধর্মের জিগিরি তোলা। তাই ক্রমে বচসা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে দেখা গেল।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর