প্রারম্ভিক বাল্য
অনেক মনােবিদ মানবজীবনের স্তরের প্রথম দুই বছরকে শৈশবের স্তর বলে চিহ্নিত করে দুই বছর থেকে বারাে বছর পর্যন্ত বয়সকালকে বাল্যের স্তর বলে মনে করেন। এই বাল্যস্তরকে তারা দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। বাল্যের প্রথম স্তরটি দুই থেকে ছয় বছর বয়সকাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরকেই বলা হয় প্রারম্ভিক বাল্য।
প্রারম্ভিক বাল্যের বৈশিষ্ট্য
প্রারম্ভিক বাল্যের বয়সকাল হল 6 থেকে ৪ বছর। এর বৈশিষ্ট্যাবলি নীচে উল্লেখ করা হল一
(১) প্রারম্ভিক বাল্যের শারীরিক বৈশিষ্ট্য: প্রারম্ভিক বাল্যে দৈহিক বৃদ্ধি ঘটলেও তার হার কমে আসে। পেশি শক্ত হয়, সালনগত ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মুখের গড়ন স্থায়িত্ব লাভ করে। শ্বাসপ্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দনের হার হ্রাস পায়, তবে রক্তচাপ বাড়ে।
(২) প্রারম্ভিক বাল্যের মানসিক বৈশিষ্ট্য: এসময় মানসিক বিকাশ ঘটে তবে হার হ্রাস পায়।ব্যক্তি তার মনের ভাবকে ভাষায় প্রকাশ করতে সক্ষম হয়।
(৩) প্রারম্ভিক বাল্যের সামাজিক বৈশিষ্ট্য: এসময় সামাজিক বিকাশ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সহযােগিতা, সহানুভূতি, প্রতিযােগিতা ইত্যাদি সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলির বিকাশ ঘটে।
(৪) প্রারম্ভিক বাল্যের প্রাক্ষোভিক বৈশিষ্ট্য: এসময় প্রাক্ষোভিক বিকাশের ক্ষেত্রে অনুবর্তনের মাধ্যমে প্রাক্ষোভিক উদ্দীপনা এবং প্রতিক্রিয়ার বিস্তার ঘটে। প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা জন্মায়।
প্রারম্ভিক বাল্যের চাহিদা
প্রারম্ভিক বাল্য বলতে ছয় থেকে আট বছর বয়সকালকে বােঝায়। এই স্তরের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যেসব চাহিদা পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল一
(১) দৈহিক চাহিদা: প্রারম্ভিক বাল্যে শিশুদের মধ্যে একাধিক দৈহিক বা জৈবিক চাহিদা দেখা যায়। এই চাহিদাগুলি হল一
- খাদ্যের চাহিদা: এই বয়সের শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধির হার শৈশবের তুলনায় কিছু কম হলেও বৃদ্ধি ঘটে, তাই অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা দেখা যায়।
- চলনের চাহিদা: খেলাধুলাে ও চলাফেরার মাধ্যমে তারা পেশির সঞ্চালন ঘটায়।
- নিদ্রার চাহিদা: এই বয়সের শিশুর মধ্যে অত্যধিক সক্রিয়তার ফলে অতিরিক্ত ঘুমের চাহিদা লক্ষ করা যায়।
- পুনরাবৃত্তির চাহিদা: শৈশবের মতাে এই বয়সেও পুনরাবৃত্তির চাহিদা দেখা যায় তবে তা দৈহিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বৌদ্ধিক কাজও সে বারবার করে।
- দৈহিক নিরাপত্তার চাহিদা: শৈশবের মতাে এই বয়সের বালকেরা দৈহিক নিরাপত্তা চায়।
(২) মানসিক চাহিদা: প্রারম্ভিক বাল্যে একাধিক মানসিক চাহিদা লক্ষ করা যায়। যেমন一
- মানসিক নিরাপত্তার চাহিদা: এই বয়সের শিশুর মধ্যে মানসিক নিরাপত্তার চাহিদা লক্ষ করা যায়।
- অনুকরণের চাহিদা: এই স্তরে শিশুদের মধ্যে অনুকরণের চাহিদা তীব্র আকার ধারণ করে।
- নতুন অভিজ্ঞতার চাহিদা: এই সময়ে শিশুর মধ্যে নতুন কিছু জানার কৌতূহল লক্ষ করা যায়।
- আত্মপ্রকাশের চাহিদা: এই সময় শিশু তার মনের ভাব প্রকাশ করতে চায়। তাতে ভাষারও উন্নতি ঘটে।
- কল্পনার চাহিদা: এই স্তরে শিশুদের মধ্যে কল্পনাপ্রবণতা প্রখরভাবে দেখা দেয়। তারা গল্প শুনতে ভালােবাসে।
- আয়ত্তে আনার চাহিদা: এই স্তরে শিশুরা সবকিছুকে নিজের অধিকারে আনতে চেষ্টা করে।
- জ্ঞানের চাহিদা: এই স্তরে শিশুদের মধ্যে জ্ঞানের চাহিদা লক্ষ করা যায়। তাদের মধ্যে পড়া এবং লেখার আগ্রহ প্রকাশ পায়।
(৩) সামাজিক চাহিদা: শিশুর জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে এই স্তরে কতকগুলি সামাজিক চাহিদা পরিলক্ষিত হয়। এই চাহিদাগুলি হল一
- সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশার চাহিদা: এই বয়সের শিশুদের মধ্যে সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশার ও খেলাধুলাের চাহিদা তীব্র হয়।
- প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাহিদা: এই স্তরে শিশুর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনােভাব কিছুটা হ্রাস পেতে থাকে।
- সমবেদনার চাহিদা: এই স্তরে শিশুদের মধ্যে সমবেদনার মনােভাব গড়ে ওঠে।
- সমর্থনের চাহিদা: এই স্তরে শিশু কোনাো কাজে কৃতিত্বের জন্য বড়ােদের এবং সমবয়সি বন্ধুদের কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাশা করে।
- নৈতিক চাহিদা: এই স্তরে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নীতিবােধ গড়ে ওঠে।