যেকোনো দেশের প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থাটি দ্বিতীয় পর্যায়ে সামগ্রিক কর্মসূচিয়ে বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষা স্তর। আধুনিক শিক্ষাবিদগণ স্বীকার করেন যে, এই স্তরের শিশুকে যে সমস্ত অভিজ্ঞতা সম্মুখীন করা হয় সেগুলি তার দৈহিক, মানসিক ইত্যাদি জীবনের বিভিন্ন দিকের বিকাশের গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশ
কমিশন প্রাথমিক শিক্ষা বলতে চার থেকে পাঁচ বছরের শিক্ষাকে অর্থাৎ প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সময়কালকে প্রাথমিক শিক্ষা বলেছেন।
ভারতীয় সংবিধানের ১৪ বছর বয়স কাল পর্যন্ত প্রাথমিক যে অবনৈতিক ও আবশ্যিক শিক্ষাদানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর অলোপ করা হয়েছে তাকে এই অর্থে প্রাথমিক শিক্ষা সে বলা হয়।
ভারতের শিক্ষা কমিশন তাই সংবিধানের প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ে শিক্ষার কাঠামোতে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স্কর পর্যন্ত শিশু শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য
কোঠারি কমিশনের প্রাথমিক শিক্ষা উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক বা কারণসমূহ বলেছেন যা আমরা নিম্নে করে আলোচনা করলাম
১ উৎপাতের মুখী জ্ঞান ও দক্ষতা সরবরাহ
শিক্ষার্থীদের উৎপাদন মুখী জ্ঞান সরবরাহ কায়িক শ্রমের প্রতি মহাযাত্রা দান করা। কর্মময় বাস্তব জীবনের উপযোগী মনোভাব জাগ্রত করা, কর্মের প্রতি আগ্রহ সঞ্চার করা প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।
তাই এই কমিশন শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও দক্ষতা উভয়ের দিকেই উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
২ জাতীয় চেতনার বিকাশ
প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে তার জীবন বিকাশের পরিবেশ ও কৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আগ্রহী হয় এবং সেগুলি যথাযথ তাৎপর্য উপলব্ধির মাধ্যমে তাদের মনে জাতীয় চেতনা নম্বর জাগ্রত হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রাথমিক শিক্ষা উদ্দেশ্য।
৩ আদর্শ নাগরিক তৈরি
প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে তাদের মধ্যে আদর্শের নাগরিকের বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ করা যায় প্রাথমিক শিক্ষার এটিই প্রধান উদ্দেশ্য।
৪ গণতান্ত্রিক বোধের বিকাশ
কমিশন বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বসবাসের উপযোগী মনোভাব জিজ্ঞাসা করে গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
৫ বাচনিক বিকাশ
প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে কমিশন শিক্ষার্থীদের বাচনিক বিকাশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
৬ বিমুর্ত চিন্তান ক্ষমতার বিকাশ
কমিশন প্রাথমিক স্তরে শিশুর মানসিক বিভিন্ন গুণাবলী বিকাশের সঙ্গে বিমুর্ত চিন্ত ক্ষমতার বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
৭ আধ্যাত্মিক বিকাশ
জীবন বিকাশের ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার মধ্যে কতগুলো নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য বলির উন্মেষের চেষ্টা করা প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে কমিশন স্থির করেছেন।
৮ দৈহিক বিকাশ
শিশুর দেহ সুগঠিত করতে হলে দৈহিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ দৈহিক সুস্থতার উপর নির্ভর করে মানসিক সুস্থতা। তাই প্রাথমিক শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল দৈহিক বিকাশ ঘটানো।
৯ জ্ঞানমূলক বিকাশ
শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশ যদি সঠিকভাবে না হয় তাহলে শিক্ষার্থী বা শিশু শিক্ষা ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছে পড়বে। তাই প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশ ঘটানো।
১০ সামাজিক বিকাশ
প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক বোধের বিকাশ ঘটানো। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীকে সামাজিক রীতিনীতি, আচার-আচরণ, প্রথা, লোকাচার, লোক নীতি প্রভৃতি সম্পর্কে পরিচিত করানো।।
১১ সৃজনশীল শক্তির বিকাশ
শিশুর মধ্যে যে সুপ্ত সৃজনশীল শক্তি রয়েছে তার পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে শিশু যেমন আনন্দ লাভ করে তেমনি তার চাহিদা পূরণ ঘটে।
১২ , সু-অভ্যাস গঠন
প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর মধ্যে সু অভ্যাস গঠন করা। এই সময় শিশুর মন থাকে অনেক নরম। অর্থাৎ, নরম মাটি তালকে আমরা যেমন খুশি আকৃতি দিতে পারি তেমনি নিজের মত করে করে তুলতে পারি, তাই এই শিক্ষা স্তরটি হল শিশু অভ্যাস গঠনের উপযুক্ত সময়।
১৩ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ
বর্তমান সমাজ বিজ্ঞানও প্রযুক্তি নির্ভর। শিশুদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ ঘটানোর প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো
কোঠারি কমিশনের মতে, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হবে সাত বা আট বছরের। প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তাবিত এই কাঠামোতে দুটি পথের ভাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন যা আমরা নিচে আলোচনা করলাম।
১ নিম্ন প্রাথমিক
পতন থেকে চতুর্থ/পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চার বা পাঁচ বছরের যে শিক্ষা কাল, তা হল নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষার স্তর। বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স ৬ থেকে শুরু করে ১0 অথবা ১১ বছর।
২ উচ্চ প্রাথমিক
বাস অষ্ট এবং সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তিন বা চার বছরের শিক্ষক কালকে উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষা স্তর বলে।