নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল প্রাথমিক শিক্ষা। স্বাধীনতার পর সংবিধানের ৪৫ নম্বর ধারায় ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুকে 10 বছরের মধ্যে অবনৈতিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন -প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা
সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রগতিক ঘটলেও তা আসনের হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যা রয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১ আর্থিক সমস্যা
প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের পথে একটু অন্যতম বড় বাঁধা হল আর্থিক সমস্যা। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভারতের প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ অনেক কম ফলস্বর প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ঘটেনি।
২ অভিভাবকদের দারিদ্র্য
অভিভাবকদের দারিদ্র প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির পথে একটা বড় অন্তরায়। যে সকল অভিভাবকদের দারিদ্র্যের সীমার নিচে বসবাস করে, তাদের কাছে শিক্ষা লাভ একটি অর্থহীন কাজ।
তারা তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয় না পাঠিয়ে খেত খামার, কলকারখানায় কাজের জন্য পাঠাতে অনেক বেশি আগ্রহী হন, আর এই মনোভাব প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক প্রসারে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩ সামাজিক সমস্যা
আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনো নিরক্ষর। নিরক্ষর পিতা-মাতা তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা সম্পর্কিত অতখানি সচেতন নয়। তাদের মনে সামাজিক কুসংস্কারও অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে যা প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে।
৪ অপচয় ও অনুন্নয়
আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির পথে বড় সমস্যা হল অপচয় ও অনুন্নয়। শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় কিন্তু অর্থনৈতিক ও নানান ধরনের সামাজিক কারণে শিক্ষা শেষ হওয়ার আগেই পড়া ছেড়ে দেয় একে বলা হয় অপচয়।
আবার অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বারবার ফেল করে একই ক্লাসে থাকতে থাকতে এক সময় বিদ্যালয়ে ছেড়ে দেয়, একে বলা হয় অনুন্নয়। ফলে অপচয় অনুন্নয় প্রাথমিক শিক্ষা অগ্রগতিতে ব্যাহত হয়।
৫ দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি
আমাদের দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সেই উপযোগী প্রয়োজনীয় প্রাথমিক শিক্ষার পরিক কাঠামোর অভাব, যা প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে সবচেয়ে বড় বাঁধা।
৬ শিশুশ্রম আইন প্রয়োগের বাধ্যতা
শিশুশ্রম রোধে সরকারি আইন প্রয়োগে বাধ্যতা প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে, অন্যতম একটি বড় বাধা বা সমস্যা। শিশুশ্রম আইন কার্যকরীভাবে প্রয়োগ না করার ফলে দারিদ্র অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানকে বিদ্যালয় না পাঠিয়ে কোন কাজে যুক্ত করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে।
৭ বিদ্যালয়ের গৃহের অভাব
বিদ্যালয়ে গৃহের জন্য অনেক শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। ফলে অনেককে শিক্ষা বাইরে থেকে যায়। যা প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে বাধা দান করে।
৮ গুরুভার পাঠক্রম
প্রাথমিক শিক্ষা পাঠক্রম মূলত তথ্য ভিত্তিক এবং বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। এই তথ্য নির্ভর পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীর কাছে গুরু ভার হয়ে উঠেছে। যা শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণে অনুগ্রহ করে তোলে ফলে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ব্যাহত হয়।
৯ ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতি
প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষাদান পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ। এই ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে একটি বড় বাধা।
১০ উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব
আমাদের দেশে এমন অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে যেগুলিতে উপযুক্ত পরিমাণ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব। যা প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারে বড় বাধা।
১১ ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষণ পদ্ধতি
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা পদ্ধতি হলো ত্রুটিপূর্ণ। এই ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতির প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের পথে একটি বড় বাঁধা।
১২ বিদ্যালয়ের পরিদর্শনের অভাব
প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়মিত পরিদর্শন হয় না। নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন না হওয়ার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির ব্যাহত হয়।
প্রশ্ন – প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা সমাধান
প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১ সংবিধানিক নির্দেশক অগ্রধিকার
সংবিধানের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যে সকল নির্দেশ গ্রহণ করা হয়েছিল তার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
২ আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি
প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে যা এই শিক্ষায় গুণগত পরিমাণগত মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
৩ বাস্তুসম্মত পাঠক্রম নির্বাচন
বাস্তব জীবনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম রচনা করতে হবে।
৪ নতুন বিদ্যালয় গৃহ নির্মাণ
বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির অবস্থা অর্থভগ্ন ও জীর্ণ। সংস্কার ও নতুন বিদ্যালয় গৃহ নির্মাণ করতে হবে।
৫ সহ পাঠক্রমিক কার্যাবলীর ওপর গুরুত্ব অলোপ
প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে আকর্ষণে করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
৬ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ
উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়োগ করতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে শিক্ষাদান করতে হবে।
৭ ব্যবহারিক বিষয়ের শিক্ষাদান
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক বিষয় শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবহারিক বিষয় শেখার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৮ ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে সাধারণ নিয়ম অনুসরণ
প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে ভারতের সব জায়গায় একটি সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা উচিত
৯ অপচয় রোধ
অপচয় রোধের মাধ্যমে প্রয়োজন সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১০ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
নিয়মিত প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিদ্যালয়ে গুলিতে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
১১ শিশুশ্রম আইন প্রয়োগ
দেশের সর্বত্র শিশুশ্রম আইন প্রয়োগ করলে অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের বিকেলে পাঠাতে বাধ্য হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।
১২ নিয়মিত বিদ্যালয়ের পরিদর্শন
বিদ্যালয়গুলি নিয়মিত পরিদর্শন প্রয়োজন। নিয়মিত বিদ্যালয় গুলি পরি দর্শনের ব্যবস্থা থাকলে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের গতিধারা অনেকটি বেশি হবে।
সব শেষে বলা যায় যে – প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত ও গুণগত মান উন্নয়ন জন্য সরকার যেমন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন তেমন সাধারণ জনগণকেও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।