কমিশন প্রাথমিক স্তরকে দুটি পর্যায়ের ভাগে ভাগ করেছেন সেই দুটি স্তরকে একটি অভিভাজ্য এক হিসেবে বিবেচনা করার পর দিয়েছেন। নিম্নে প্রাথমিক স্তরের পাঠক্রমে যে সকল বিষয় ও অভিজ্ঞতাগুলির অন্ধভক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা করা হল-
প্রশ্ন – প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো
১ নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম
প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে পাঠক্রমের দুটি ভাগের থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঠক্রম হল নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম। যা নিচে আমরা পয়েন্ট আকারে আলোচনা করলাম।
একটি ভাষা
মাতৃভাষা আঞ্চলিক একটি ভাষা।
গণিত
শিশুদের মধ্যে গণিতের প্রাথমিক ধারণা বিকাশ সাধন করে।
পরিবেশ বিজ্ঞান ও সমাজবিদ্যা
পরিবেশ সম্বন্ধে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পরিবেশ বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান পাঠ করবে। তবে এই বিষয়গুলিতে প্রাথমিক ধারণা থাকবে। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের রোমান্স আলফাবেট শেখানো হবে।
সৃজনশীল কাজ
সংগীত, নাটক এবং বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুরা নিজেদের সৃজনশীলতার প্রকাশ করতে পারে।
কর্মশিক্ষা ও সমাজসেবা
কাগজ কাটা, মাটি বা প্লাসটিসিন দিয়ে মডেল তৈরি, সুতো কাটার কাজ, সুচের কাজ, বাগান তৈরি ইত্যাদি। এছাড়া এই শিক্ষা স্তরে সমাজ সেবামূলক কাজের মধ্যে শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কার, বিদ্যালয়ের সাজানো ইত্যাদি কাজগুলি থাকে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা
শিশুদের মধ্যে ভালো স্বাস্থ্যভাস গড়ে তোলার জন্য সেই উপযোগী শিক্ষা দেওয়া দরকার।
২ উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম
উচ্চ প্রাথমিক স্তরে কমিশন যে সকল বিষয় পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছেন তা হল –
মাতৃভাষা বা আঁজবি ভাষা এবং হিন্দি বা ইংরেজি ভাষা এ ছাড়া একজন শিক্ষার্থী ইংরেজি, হিন্দি আঞ্চলিক ভাষা মধ্যে যেকোনো একটি ভাষাকে তৃতীয় ভাষা ঐচ্ছিক হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।
গণিত
উচ্চ প্রাথমিক স্তরে গণিতের মধ্যে পার্টি গণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি করতে হবে। গণিতের মধ্যে যে সকল বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা হল – গণিতের বিভিন্ন সূত্র, গণিতিক নীতি ও যুক্ত মুলক চিন্তন। শুধু তাই , পাঠ্যসূচিতে থাকবে বিভিন্ন গ্রাফ, চিত্র সমন্ধে ধারণা
বিজ্ঞান
বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কমিশন পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণীর পাঠক্রমে বিজ্ঞান বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে বলেছেন।
পঞ্চম শ্রেণী – পদার্থবিদ্যা, ভূবিদ্যা, জীববিদ্যা।
ষষ্ঠ শ্রেণি – পদার্থবিদ্যা, রাসায়ন, জীবন বিজ্ঞান।
সপ্তম শ্রেণী– পদার্থবিদ্যা, রাসায়ন, জ্যোতিবিদ্যা।
সমাজবিজ্ঞান
সমাজবিজ্ঞানের পাঠক্রমে থাকবে ইতিহাস, ভূগোল ও পৌরবিজ্ঞান।
চারুকলা
চারুকলার পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ যেমন – গান, অঙ্কন, সূচের কাজ ইত্যাদি।
কর্মশিক্ষা ও সমাজসেবা
প্রাথমিক শিক্ষার এই স্তরের রয়েছে – মাটির কাজ, মডেল তৈরি, সেলাই, বাগানের কাজ ইত্যাদি। কর্ম শিক্ষামূলক কাজ উৎপাদনের কেন্দ্র করে গড়ে গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্ম শিক্ষার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ সেবামূলক কাজের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বিকাশ ঘটবে।
সেই জন্য প্রতিবছর বিদ্যালয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের সমাজ সেবামূলক কাজের ব্যবস্থা থাকবে।
শারীরিক শিক্ষা
সুস্থ দেহের সুস্থ মনের বাস। তাই প্রতিটি বিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ কোন ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকবে – ফুটবল, ভলি, হকি, কবাডি, ক্রিকেট প্রভৃতি খেলাধুলা রয়েছে।
নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা
শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্যে সপ্তাহে একটি বা দুটি ক্লাস এই শিক্ষার জন্য রাখতে হবে।
যেমন – বিভিন্ন ধরনের নীতি গল্প, বিভিন্ন ধরনের ধর্মের নীতি শিক্ষা ইত্যাদি।
প্রশ্ন- প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য নানা ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
আমাদের দেশে বহু প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলি সরকার দ্বারা পরিচালিত। এই বিদ্যালয়গুলি অবনৈতিক এবং সকল ছেলেমেয়ে এখানে শিক্ষা সুযোগ লাভ করতে পারে।
এই সকল বিদ্যালয় পরিকাঠামো অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক ভালো। তাই দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই ধরনের , বিদ্যালয়ের উপর বেশি নির্ভর করে।
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বেসরকারি বিদ্যালয়গুলি পুরোপুরি ব্যক্তিগত মালিকানায় পরিচিত হয়। সরকারি দিক থেকে কোনো অর্থ সাহায্য করা হয় না।
তবে সরকারের নিয়ম নীতি মেনে বিদ্যালয়ের পরিচালিত হয়ে থাকে। এই ধরনের বিদ্যালয়ের চাহিদা একসময়ের শহরে বেশি ছিল এবং বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ও এই বিদ্যালয়ের চাহিদা বাড়ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে বেতন দিয়ে শিক্ষক গ্রহণ করতে হয়।
বুনিয়াদি বিদ্যালয়
মহাত্মা গান্ধীজি ১৯৩৭ সালে প্রথম এই ধরনের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বুনিয়াদি বিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় সামাজিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
এই বিদ্যালাগুরি দুই ধরনের – ১ নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২ বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বুনিয়াদী বিদ্যালয়গুলি মূলত কর্মকেন্দ্রিক।
এখানে অনুবদ্ধ পদ্ধতি মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হয়। এই বিদ্যালয়ের কর্মকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয় বলে একসঙ্গে শিক্ষার্থী একাধিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারে।
এক শিক্ষক বিদ্যালয়
আমাদের দেশে এখনো এমন অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে যেখানে একজন শিক্ষক দ্বারা পরিণত হয়ে থাকে। সাধারণত এই ধরনের বিদ্যালয়ে দেখা যায় গ্রাম অঞ্চলে যেখানে শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
একজন শিক্ষকই বিদ্যালয়ে পরিচালনা করেন এবং দুই বা তিনটি শ্রেণীকে শিক্ষা দান করেন। একজন শিক্ষকের দ্বারা বিদ্যালয়ের পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। তবে বর্তমানে এই ধরনের বিজ্ঞানের সংখ্যা খুবই কম।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত বিদ্যালয়
আমাদের দেশে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে যেগুলি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এই বিদ্যালয় গুলি অনেকখানি ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়।
স্বায়ত্তশাসন সংস্থা কর্তৃত্ব পরিচালিত বিদ্যালয়
সমাজে অনেক স্বায়ত্তশাসন সংস্থা রয়েছে যারা প্রাথমিক শিক্ষাদানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যেমন- পৌরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিধি মুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়
নিয়ন্ত্রিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে আর এক ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সময়সূচী ও পাঠ্যক্রম নির্বাচন করতে পারে। এই ধরনের বিদ্যালয় হল নৈশ বিদ্যালয়।