প্রাচীন মিশরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতার রাজতান্ত্রিক কাঠামাে
প্রাচীন নদীকেন্দ্রিক মিশরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতায় রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল। মেনেস নামে এক ক্ষমতাশালী নেতার প্রচেষ্টায় মিশরের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল যুক্ত হয়ে ৩००० খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশর ঐক্যবদ্ধ এক বৃহৎ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অপরদিকে সুমেরীয়রা আনুমানিক ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ রাজতান্ত্রিক যুগে অনুপ্রবেশ করে।
[1] মিশর: মিশরে প্রাক্রাজবংশীয় পর্ব লিবীয়, সিমাইট এবং নুবীয়রা নীলনদের তীরে এসে বসবাস শুরু করে। এসময় মিশরীয়রা এক সংকর জাতিগােষ্ঠীতে পরিণত হয়। এদের ওপর ভিত্তি করেই এখানকার রাজতান্ত্রিক কাঠামাে গড়ে ওঠে। আনুমানিক ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ উচ্চ ও নিম্ন মিশর এক হয়ে অখণ্ড মিশরদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই মিশরের প্রথম রাজা ছিলেন মিনেস। তিনিই ছিলেন প্রথম ফ্যারাও। সমগ্র রাজবংশীয় যুগে মিশরে সর্বমােট ৩১টি রাজবংশ রাজত্ব করে।
[2] সুমের: সুমেরে আদি রাজবংশের আমলে এক সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কাঠামাের বিকাশ ঘটে। সুমেরের ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নেতার পদবি ছিল পাতেজী। এই পাতেজী ছিলেন একাধারে ধর্মযাজক, সমরনেতা এবং সেচ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। সুমেরের রাষ্ট্র কাঠামােয় এরাই পরবর্তীকালে রাজার স্থান নেয়। সুমেরের রাষ্ট্র কাঠামােয় পুরােহিতদের বিশেষ স্থান ছিল। এই পুরােহিতদের মধ্যে অনেকে আবার রাজা উপাধিও ধারণ করত।
মিশর ও সুমেরীয় সভ্যতার ধর্ম
নদীকেন্দ্রিক সভ্যতাগুলির মধ্যে প্রাচীন মিশরীয় ও সুমেরীয়রা বহু দেবদেবীর পূজায় বিশ্বাসী ছিল। তবে মিশরীয়রা পারলৌকিক জীবন নিয়ে অধিক উৎসাহী হলেও সুমেরীয়রা ইহজাগতিক কল্যাণের লক্ষ্যেই ধর্মীয় আরাধনায় নিয়ােজিত হয়।
[1] মিশর
- ধর্মবিশ্বাস: মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাসে বহু দেবতাবাদ ও পরবর্তীকালে একেশ্বরবাদের ধারণা মেলে। মিশরীয়রা মনে করত মৃত্যুর পর মৃতদেহকে সংরক্ষিত করে রাখলে তাতে আবার আত্মা ফিরে আসে। এই ধারণা থেকে তারা মৃতদেহে রাসায়নিক পদার্থ মাখিয়ে মমি হিসেবে সংরক্ষণ করত।
- দেবদেবী: প্রাচীন মিশরের প্রধান দেবতা ছিলেন সূর্যদেবতা ‘রে (Re) বা ‘রা’ (Ra)। পরে এই সূর্যদেবতার নাম বদলে হয় ‘আমন বা আমন রে। এ ছাড়াও নীলনদ এর দেবতা ছিলেন ওসাইরিস (Osiris), আকাশের দেবতা ছিলেন হােরাস, জ্ঞান ও লেখনির দেবতা ছিলেন যােথ প্রমুখ।
[2] সুমের
- ধর্মবিশ্বাস: সুমেরবাসীর জীবনাচারে ধর্ম-বিশ্বাসের বিশেষ স্থান ছিল। তারা বহু দেবদেবীর পূজায় বিশ্বাসী ছিল। পারলৌকিক নয় ইহলৌকিক, জীবন নিয়ে সুমেরবাসী বিশেষ উৎসাহী ছিল।
- ধর্মীয় প্রকৃতি: সুমেরবাসীর ধর্মীয় প্রকৃতি ছিল বহু দেবদেবীকেন্দ্রিক। অর্থাৎ তারা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল।
- ধর্মমন্দির: সুমেরবাসীর ধর্মমন্দিরের নাম ছিল জিগুরাত। সাধারণত নগরগুলিতেই অবস্থিত ছিল জিগুরাত বা স্বর্গের পাহাড় যা পাহাড় সদৃশ সিঁড়ির ধাপ কেটে তৈরি হত।
- দেবদেবী: সুমেরীয়দের কয়েকজন দেবদেবী ছিলেন- (a) শামসসূর্যদেবতা, (b) এনলিল বৃষ্টি, বাতাস ও বন্যার দেবতা, (c) এনফিজলের দেবতা, (d) ইনাননা—প্রেম ও উর্বরতার দেবী, (e) নাম্মা—সমুদ্রও মাতৃদেবী, (f) নারগল— প্লেগ রােগের দেবতা, (g) আন বা আনু—আকাশের দেবতা, (h) কি—পৃথিবীর দেবী। ক্ষমতার বিচারে সুমাররা সূর্যদেবতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিত।
- পারলৌকিক ক্রিয়া: কফিন ছাড়াই সুমেররা মৃতদেহ মাটি চাপা দিত। তারা মৃতদেহকে সংরক্ষণের কোনাে চেষ্টা করত না। এক্ষেত্রে তাদের ধারণা ছিল পারলৌকিক জীবনে আত্মা কিছুকাল অবস্থানের পর অদৃশ্য হয়ে যায়।