পিরামিড তৈরির কারণসমূহ
প্রাচীন কালে মিশরের ফ্যারাও এবং সম্ত্রান্তদের মৃতদেহের সমাধিস্থলে নির্মিত স্মৃতিসৌধকে বলা হত পিরামিড। মিশরের পিরামিডগুলি তৈরি করা হয়েছিল নানা কারণে।
[1] মৃতদেহের সংরক্ষণ: মিশরবাসী বিশ্বাস করত মৃত্যুর পরেও মানুষের আর-একটা জীবন রয়েছে। তাই তারা মৃতদেহকে মমি করে কাঠের বাক্সে ভরে সমাধিস্থ করত। প্রাচীন মিশরে কেবলমাত্র ফ্যারাও এবং ধনী অভিজাত শ্রেণির লােকেরাই মৃত্যুর পর মৃতদেহকে সংরক্ষণের অধিকারী ছিল। ধনী পুরােহিত শ্রেণির তত্ত্বাবধানে তৈরি হত পিরামিডগুলি।
[2] আত্মার সংরক্ষণ: প্রাচীন মিশরবাসী বিশ্বাস করত যে মৃত্যুর পর আত্মা দেহের মধ্যেই অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকে। তাই আত্মাকে ইহলােকের দেহেই বাস করার সুযােগ দেওয়া উচিত। যাতে বিশেষ পরিস্থিতিতে মৃতদেহটি পুনরুজ্জীবিত হয়। এই ধারণা থেকেই মৃতদেহগুলিকে মমি হিসেবে সংরক্ষণ করা হত। আর সেই সমাধিস্থলে পিরামিড নির্মিত হত।
[3] স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ: প্রাচীন মিশরের ফারাও এবং অভিজাতগণ পিরামিড তৈরির মধ্যে দিয়ে নিজেদের সমাধিস্তম্ভ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। প্রকৃত অর্থে তারা চেয়েছিলেন মৃত্যুর পরেও তাদের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে। নীলনদের তীরে ৪০০০ বছর পূর্বের স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আজও টিকে রয়েছে।
[4] রক্ষণশীল মানসিকতা: প্রাচীন মিশরের অধিবাসীরা ছিল রক্ষণশীল মনােভাবাপন্ন| তারা মনে করত মানুষের দেহ থেকে শুরু করে সব কিছুই প্রকৃতির দান, যা কখনোই নষ্ট করা উচিত নয়। এই মনােভাব থেকেই তারা মৃতদেহকে রক্ষার জন্য মমি বানাত। প্রথমদিকে তারা এই মমিকে সাধারণভাবেই সমাহিত করত। মাটির নীচে শায়িত মমির পাশে তারা বহু ধনরত্ন এবং তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র রাখত। কিন্তু অচিরেই সেগুলি লুঠ হয়ে যেত। তাই মমির সুরক্ষার প্রয়ােজনীয়তা থেকেই তৈরি হল পিরামিড।
[5] মহিমা প্রচার: মিশরের ফ্যারাওগণ পিরামিড তৈরির মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিজেদের মহিমা প্রচার করতে চেয়েছিলেন। মেনেস, খুফু, তুতেনখামেন, দ্বিতীয় রামেসিস, নেফরা- সহ বিভিন্ন ফ্যারাও এই লক্ষ্য নিয়েই বড়াে বড়াে পিরামিড তৈরি করে গেছেন।
উল্লেখযােগ্য দুটি পিরামিড
[1] প্রথম পিরামিড: মিশরের প্রথম পিরামিডটি তৈরি হয়েছিল ফ্যারাও জোসের-এর সমাধির ওপর। স্থাপত্যশিল্পী ইমহােটেপের নেতৃত্বে এটি তৈরি হয়। তিনকোণবিশিষ্ট এই পিরামিডটির উচ্চতা হল প্রায় ৬০ মিটার ধাপে ধাপে নির্মিত হয়েছিল বলে এটিকে ধাপ পিরামিডও বলা হয়।
[2] খুফুর পিরামিড: মিশরে চতুর্থ রাজবংশের দ্বিতীয় ফ্যারাও ছিলেন খুফু বা খিয়পস (Cheops)। মিশরের কায়রাে শহরের কাছে গিজা-তে তিনি নিজের নামে সর্ববৃহৎ এই পিরামিডটি তৈরি করান |প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক ২০ বছর ধরে এই পিরামিডটি তৈরি করেন। এই পিরামিডটির উচ্চতা হল ৪৫০ ফুট, পরিধি হল ৭০০ ফুট। খুফুর পিরামিডটির প্রবেশদ্বারের উচ্চতা মাটি থেকে প্রায় ৪৯ ফুট। ২০ লক্ষ পাথর খণ্ড দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল।
তুতেনখামেন-এর সমাধি
মিশরের কিশাের ফ্যারাও ছিলেন তুতেনখামেন। ঐতিহাসিকদের অনুমান, তিনি মাত্র ১৭ (মতভেদে ১৯) বছর বয়সে মারা যান। ব্রিটিশ পুরাতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার ‘ভ্যালি অফ দ্য কিংস অঞ্চলে তুতেনখামেনের সমাধিস্থল আবিষ্কার করেন। তুতেনখামেন-এর মমিটির মুখে সােনার মুখােশ ছাড়াও তার গােটা দেহে সােনা দিয়ে প্রায় ১৪৩ ধরনের সামগ্রী সাজানো ছিল।