ভারতের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার প্রকৃতির উন্নতির সাধন এখনো কিন্তু বাস্তবায়িত করা যায়নি।
কারণ এগুলির অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গুণগত জীব থেকে অন্তত নিম্নমানের। প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যা দেখা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১ অর্থের অভাব
প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে সেগুলি সাধারণত মানুষে পক্ষে তাদের সন্তানদের পড়ানো সম্ভব হবে না। আর যে সকল সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলি সরকারি অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনে খুবই সামান্য।
২ পাঠক্রমের সমস্যা
প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের সৃজনশীল ও সক্রেতা ভিত্তিক কার্যাবলীর সুযোগ অনেক কম, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার ও সত্যতা ভিত্তিক কার্যাবলী পরিবর্তনের তাত্ত্বিক শিক্ষার উপরই বেশি জোর দেয়া হয়েছে।
এর ফলে পাঠক্রম শিক্ষার্থীর কাছে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আকর্ষণ না কাজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
৩ উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব
শুধু তাই নয় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব। বেশিরভাগ বেসরকারি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে অল্প বেতনে উপযুক্ত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ হীন শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়। যার কারণে এই বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার প্রকৃতি উদ্দেশ্য সফল করা সম্ভব হয় না।
৪ প্রয়োজনীয় শিক্ষকপকরণীয় অভাব
প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিখনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সকল দরকারি জিনিসপত্র প্রয়োজন তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ফলে আজ প্রাথমিক শিক্ষাকে কার্যকালের রূপদান করা অসম্ভব হয়ে উঠেছেন।
৫ অভিভাবকদের সচেতনার অভাব
শুধু তাই নয় প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বেশিরভাগ অভিভাবক সচেতন নয়। এবং প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষিত সচেতন অভিভাবকের উপর।
কিন্তু আমাদের দেশে এই ধরনের অভিভাবকের সংখ্যা খুব কম তারপরে এই শিক্ষার অগ্রগতি পিছনে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে।
৬ সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর অভাব
প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু অধিকাংশে বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিক বিশেষ ব্যবস্থা নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের বিশেষ আকর্ষণ বোধ করেনা।
৭ অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাদান পদ্ধতি
অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় অবনৈতিক শিক্ষাদান পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করা হয়। ফলে বর্তমান এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর নিকট বোঝা হয়ে উঠেছে।
৮ গবেষণা সমস্যা
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের প্রথম শিক্ষার নিয়ে কোন বিশেষ গবেষণা তৈরি হয়নি বা পরিকল্পনা শুরু হয়নি।
৯ বেসরকারি উদ্যোগের অভাব
বেসরকারি উদ্যোগের অভাব অর্থাৎ এখানে বলা হয়েছে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় বেসরকারি প্রচেষ্টা গড়ে উঠেছে।
এই সকল সংস্থা গুলি তাদের ব্যবসার দিক থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তারা চেষ্টা করে কত কম খরচে শিক্ষাদান করা যায়। যার ফলে শিক্ষার গুণগতমান অনেকটা নিম্নমানের হয়।
১০ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা
প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার নির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থা নেই। কারণ এই প্রতিষ্ঠান গুলির ব্যক্তিগত সরকারি উভয় মালিকানায় থাকায় কোনো নিয়ন্ত্রণের বিশেষ আইন এখনো পর্যন্ত চালু হয়নি।
নিজের মতো তার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, যার পথে বিভিন্ন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে আর এই সমস্ত ভুল কিন্তু প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকিন্তু উন্নয়নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সমাধান
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার যে সকল সমস্যা রয়েছে সেগুলি সমাধানের জন্য নিচে আলোচনা বিষয়গুলির গুলো কিন্তু অবলম্বন করা যেতে পারে।
১ সরকারি উন্নয়নের পরিমাণ বৃদ্ধি
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নয়নের জন্য সরকার যে উন্নয়ন দিয়ে থাকে তার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করে সেদিকে নজর দিতে হবে।
২ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব সচেতন বৃদ্ধি করা
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলিকে আরো বেশি দায়িত্ববান ও যত্নবান হতে হবে। এবং যদি দরকার পড়ে তবে কিন্তু একটি কমিটি গঠন করতে হবে।
৩ অভিভাবকের সচেতনতা বৃদ্ধি
এই সমস্ত শিক্ষা সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করে তুলতে হবে। এবং তাদের বিষয়বস্তুটি সহজ করে বুঝিয়ে বলতে হবে আসলে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর বা শিশুর মধ্যে থাকা খুবই প্রয়োজন।
৪ গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি
প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির মূলত শহরকেন্দ্রিক। শহর অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা যেভাবে এই শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারছে।
তার তুলনায় কিন্তু গ্রাম অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাই শিক্ষার সমান অধিকারের কথা মাথা রেখে গ্রাম অঞ্চলে ও এই সমস্ত বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটাতে হবে।
৫ প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বিকাশ কেন্দ্র
ভারতের প্রাথমিক শিক্ষার সুষম বিকাশের জন্য রাজ্য এবং জেলা স্তরে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন।
এই সকল কেন্দ্রে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও অভিভাবকদের শিশু পরিচর্চা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
৬ শিক্ষিকা নিয়োগ
প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের পরিবর্তে বেশি করে শিক্ষিকা নিয়োগ করতে হবে।
৭ উপযুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিক্ষাদান
প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপযুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
৮ খেলা ভিত্তিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দান
শুধু তাই নয় শারীরিক বিকাশ টা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ তবুও কিন্তু প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় এর বেশিরভাগ তাত্ত্বিক শিক্ষাদান করা হয়। তাই খেলা ভিত্তিক পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করা কিন্তু একান্তই প্রয়োজন।
৯ প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার উপর গবেষণা
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে বৈচিত্রপূর্ণ ও করে তুলতে হলে গবেষণার উপর আরো বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
১০ নিয়মিত পরিদর্শন
এই সমস্ত বিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সুতরাং সমস্ত উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে – প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কিছু সমস্যা থাকলেও বর্তমানে এই শিক্ষা গুরুত্ব প্রতিনিয়ত কিন্তু বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে।।
বর্তমানে কিন্তু এই শিক্ষা শহর ছাড়িয়ে গ্রাম অঞ্চলে কিন্তু এখন প্রাথমিক শিক্ষার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়।