প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের শিল্পের অগ্রগতির কারণ কি ছিল? এই সময় শিল্পের বিকাশের সরকার কি কি উদ্যোগ নিয়েছিল?

সূচনা

ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিকে সরকার এদেশে শিল্পের বিকাশ বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। এখন ভারতের ব্রিটিশ শাসন কারখানা গুলি কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়। ব্রিটেনে উৎপাদিত শিল্প জাত করল ভারতে বাজার দখল করে নিলে ভারতে কুটির শিল্প ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়। অবশ্য মহাবিদ্রোহের পরবর্তীকালে ভারতের শিল্পায়নের বিদেশি পুঁজির অনুপ্রবেশ করতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতের শিল্পে যথেষ্ট বিকাশ ঘটে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু পর থেকে ভারতের শিল্পের অগ্রগতির কারণ

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পর থেকে ভারতে শিল্পের অগ্রগতির কয়েকটি কারণ ছিল, যেমন-

১. পুঁজিপতিদের সুবিধা দান

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বৃটেনের কলকারখানা গুলি যুদ্ধ সংক্রান্ত কাজে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পর্যাপ্ত ভোগ্য অন্য উৎপাদনের এবং ভারতে পর্যাপ্ত শিল্পজাতপূর্ণ সামগ্রী রপ্তানি করতে ব্রিটেন ব্যর্থ হয়। এই শূন্যতার সুযোগ ভারতে বাজার দখলের উদ্দেশ্যে আমেরিকা ও জাপান তৎপরতা শুরু করে। তৎপরতা প্রতিরোধ করতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় পুজি প্রতি শিল্পস্থানে কিছু কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে শুরু করে।

২. সংরক্ষণ নীতি

ব্রিটিশ সরকার ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের পরে দেশে বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি অর্থাৎ যেসব শিল্পের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের বিশেষ কিছু সুবিধা দানের নীতি গ্রহণ করে। ফলে বিদেশী শিল্প পণ্যের অসম প্রতিযোগিতার হাত থেকে ভারতীয় শিল্প কিছুটা রক্ষা পায়। এই পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসর হলেও ভারতের শিল্পায়নের সুবিধা হয়।

৩. অর্থনৈতিক মহামন্দা

১৯২৯-থ্রিস খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট বা মহামন্দা দেখা দেয়। এতে ব্রিটিশ শিল্পীর অগ্রগতি ও যথেষ্ট ব্যাহত হয়। এই সুযোগে ভারতের শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করে।

৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধের প্রয়োজনীয় শিল্প জাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশে বিশ্বযুদ্ধ জড়িয়ে পড়লে ইউরোপের শিল্পের উৎপাদন ও অগ্রগতির দারুন ভাবে ব্যাহত হয়। ইউরোপীয় শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সুযোগে ভারতের শিল্পের বিকাশ সম্ভাব হয়।

৫. দেশীয় পুঁজি পতিদের ভূমিকা

শিল্পের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত মূলধনের বিনিয়োগ একান্ত অপরিহার্য। ইতিপূর্বে ভারতের শিল্পায়নের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ইউরোপীয় মূলধনের বিনিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু ২০ শতকের প্রথম থেকে এদেশে শিল্পায়নে ভারতীয় পুজির প্রতি ও শিল্পপতিরাও যথেষ্ট পরিমাণে মূলধন বিনিয়োগ করতে থাকে।

শিল্পের অগ্রগতিতে সরকারি উদ্যোগ

বিশ্ব যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ভারতের বিলাতি শিল্প পণ্যের আমদানি ব্যাহত হলে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভারতের শিল্পায়নের ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে, যেমন –

১. শিল্প কমিশন নিয়োগ

ভারতের সরকার ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে স্যার টমাস হল্যান্ড নেতৃত্বে একটি শিল্প কমিশন গঠন করে। এই কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের শিল্পের প্রসার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ভারতীয় মূলধন বিনিয়োগের সম্ভাবনা খ্যাতি দেখায়।

২. কমিশনের সুপারিশ

সরকার কর্তৃক নিযুক্ত শিল্প কমিশন ভারতের শিল্পের প্রসারের জন্য সরকারকে উৎসাহ মূলক হস্তক্ষেপ নীতি গ্রহণের সুপারিশ করে। ভারতের শিল্পের অগ্রগতির প্রয়োজন ই কমিশন সরকারকে যেসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেয়, সেগুলি হল- (১) যানবাহন ও যোগাযোগ, (২) সর্বভারতীয় প্রাদেশিক শিল্প বিভাগ প্রতিষ্ঠা, (৩) কারিগরি শিক্ষার প্রসার, (৪) বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি চাকরি গুলি সমন্বয় প্রভৃতির উদ্যোগ নিতে হবে।

৩. সরকারি রিপোর্টের ভূমিকা

ব্রিটিশ সরকার ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসর্ফোড সুপারি সাইন হিসেবে গৃহীত হয়েছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে।

৪. সংরক্ষণ নীতি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শিল্পগুলি বিদেশি শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এদেশের শিল্পপতি ও জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ দিতে থাকে। ফলে সরকার ভারতের শিল্পক্ষেত্রে কিছু কিছু সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করে। লোহা, ইস্পাত, কাগজ, সুতি বস্ত্র, চিনি, ও দেশলাই প্রভৃতি শিল্প পণ্যের উপর ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কিছুটা কমানো হয়। এর ফলে ভারতের শিল্পের বিকাশ শুরু হয়।

উপসংহার

বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের প্রয়োজন এ ব্রিটিশ সরকার ভারতের শিল্পের বিকাশে সহানুভূতি দেখালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরবর্তীকালে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। যুদ্ধের পর বৃটেনের কারখানা গুলিতে শিল্প উৎপাদন পুনরায় বৃদ্ধি পায় এবং বিপুল পরিমাণ শিল্পপূণ্য ভারতে বাজারে আসতে থাকে। ফলে সরকারে ভারতীয় শিল্প প্রতীদের প্রতি বিমাতৃ সুভলনীতি গ্রহণ করে। ফলে ভারতের শিল্পায়ন ও শিল্পের পণ্যের গতি আবার হ্রাস পেয়ে প্রায়। ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত ৫১, ০২০ গজ সুতিবস্ত্র বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ২৮, ৯৯০ গজ।

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস বইয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment