পাঠক্রম প্রণয়নে শিক্ষাশ্রয়ী দর্শনের অবদান
পাঠক্রম-প্রণয়ন শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদদের মধ্যে নানা মত লক্ষ করা যায়। শিক্ষাশ্রয়ী দর্শনের প্রতিটি শাখা পাঠক্রম প্রণয়ন প্রসঙ্গে আপন আপন অভিমত ব্যক্ত করেছে। যেমন一
(১) আদর্শবাদ ও পাঠক্রম : আদর্শবাদীদের মতে, শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল আত্মােপলব্ধি। শিক্ষার্থীকে শিক্ষার মাধ্যমে সত্য, শিব ও সুন্দরকে জানতে হবে। তাই পাঠক্রমে প্রাচীন ভাষা, শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস, গণিত প্রভৃতি বিষয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
(২) প্রকৃতিবাদ ও পাঠক্রম : প্রকৃতিবাদীদের মতে, শিক্ষার্থীর সারা শিক্ষাজীবন জুড়ে থাকবে প্রকৃতি। প্রকৃতিই হবে শিক্ষার্থীর শিক্ষক, শিক্ষালয় এবং শিক্ষার উপাদান বা উপকরণ। শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির বুকে স্বাভাবিক নিয়মে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। প্রকৃতি ও পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্যই হবে পাঠক্রমের বিষয়বস্তু।
(৩) জড়বাদ ও পাঠক্রম : জড়বাদীদের মতে, পাঠক্রমে এমন সব বিষয়কে স্থান দিতে হবে, যেগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন বস্তুকে সঠিকভাবে জানতে সাহায্য করে এবং ব্যক্তি ও সমাজকল্যাণের কাজে লাগে। সেই কারণে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগগুলিকে পাঠক্রমে সবচেয়ে আগে স্থান দিতে হবে।
(৪) মানবতাবাদ ও পাঠক্রম : মানবতাবাদী দর্শনে বিশ্বাসীরা শিক্ষাব্যবস্থাকে সবরকম কৃত্রিমতা থেকে মুক্ত করে যথার্থ মানবধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চান। তারা স্বাধীনতার পূজারি। তাঁরা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির ওপর জোর দিতে চান।
(৫) প্রয়োগবাদ ও পাঠক্রম : প্রয়ােগবাদী দর্শন অনুযায়ী বলা হয়—মানুষ মূলত দুটি সত্তার অধিকারী। একটি হল জৈবিক সত্তা আর অপরটি হল সামাজিক সত্তা। শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের বিকাশের সঙ্গে সামাজিক গুণের বিকাশ দ্বারা শিক্ষার্থীকে সমাজের উপযােগী হয়ে উঠতে সাহায্য করাই হল প্রয়ােগবাদী শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
ওপরের আলােচনা থেকে বােঝা যায়, শিক্ষাশ্রয়ী দর্শনের বিভিন্ন শাখার কাছে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ভিন্ন হওয়ায় তারা পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রেও ভিন্ন ভিন্ন মত পােষণ করেছে। ফলে যে-কোনাে একটি মতবাদকে অবলম্বন করে পাঠক্রম নির্ধারণ করলে, সেই পাঠক্রম বর্তমান পরিস্থিতিতে একেবারেই গ্রহণযােগ্য হবে না। তাই এইসব মতবাদগুলির প্রয়ােজনীয় অংশ চয়ন করে একটি আদর্শ বাস্তবসম্মত পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে।