পাঠক্রম
‘পাঠক্রম’ বলতে বােঝায় শিক্ষার্থীদের সমস্ত রকমের অভিজ্ঞতা যা তারা শ্রেণিকক্ষে, কর্মশালায়, খেলার মাঠে এবং শিক্ষকদের সঙ্গে যােগাযােগের মাধ্যমে লাভ করে। এই অর্থে সমগ্র বিদ্যালয়জীবনই পাঠক্রম যা শিক্ষার্থীর জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রকেই স্পর্শ করে এবং সুসংহত ব্যক্তিত্ব গড়ে তােলে।
আধুনিককালে শিক্ষাবিদদের মতে, পাঠক্রম হল ব্যক্তিজীবনের সার্বিক বিকাশে সহায়ক, সুনির্বাচিত অভিজ্ঞতা সমূহের যথার্থ সমন্বয়সাধন।
‘কারিকুলাম’ শব্দের উৎস
বাংলা ‘পাঠক্রম’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল কারিকুলাম (Curriculum)। আর ইংরেজি ‘কারিকুলাম শব্দটি মূল লাতিন শব্দ কুরিয়ার (Currere) থেকে এসেছে।
‘কারিকুলাম’ শব্দের অর্থ
লাতিন শব্দ ‘কুরিয়ার’-এর অর্থ হল ‘Race Course’ বা ‘দৌড়ের পথ’। দৌড়ের মাঠে যেমন একটি পথ ধরে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গন্তব্যস্থলে বা লক্ষ্যে পৌঁছােতে হয়, তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীও কারিকুলামের সাহায্যে তার চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার পূর্বনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছােতে চেষ্টা করে।
পাঠক্রমের সাংগঠনিক উপাদান
পাঠক্রমের সাংগঠনিক উপাদানগুলিকে মূলত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। নীচে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হল一
(১) সক্রিয়তাজনিত উপাদান : পাঠক্রমের সাংগঠনিক উপাদানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সক্রিয়তা। শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলিকে সার্থকভাবে রূপায়িত করতে হলে সক্রিয় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীকে শেখার সুযােগ দিতে হবে।
(২) সংগতিমূলক উপাদান : পাঠক্রমের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সংগতি আনা বিশেষ প্রয়ােজন। একটি বিষয়ের সঙ্গে অন্য বিষয়ের সংযােগ চিহ্নিত করে তারই পাশাপাশি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরিকল্পিত কার্যসূচির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে পাঠক্রম নির্ধারণ করতে হবে।
(৩) পরিবর্তন সম্পর্কিত উপাদান : পাঠক্রম সবসময় পরিবর্তনশীল হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে যেমন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে, তেমনি সমাজের আশা-প্রত্যাশারও পরিবর্তন ঘটছে। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতি রেখে পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
(৪) ক্রমবিন্যাসজনিত উপাদান : পাঠক্রম প্রণয়নের সময় ক্রমবিন্যাসের নীতিটি বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। তাই যে-কোনাে স্তরের পাঠক্রম নির্ধারণ করার সময় পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীস্তরের পাঠক্রমের সঙ্গে তার ক্রম বজায় রাখতে হবে।
(৫) আনন্দদায়ক উপাদান : পাঠক্রম প্রণয়নের সময় বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যালয়ে আনন্দদায়ক পরিবেশ গড়ে তােলা হয় এবং শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী করার চেষ্টা করা হয়।