চরম একাকিত্ব
‘নানা রঙের দিন’ নাটকে দেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ে সৃষ্ট একটি অবিস্মরণীয় চরিত্র হলো রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। রজনী চ্যাটে যে বিগত যুগের এক জনপ্রিয় অভিনেতা। যিনি আজ জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছেছেন। অতীত গৌরব হারানোর অভিনেতা নিজের জীবন যন্ত্রণা ভুলতে আজ সস্তা দামের মদ্যপান করেন। শিল্পের জন্য আত্ম নিবেদিত রজনী চাটুজ্জে উৎসর্গ করেছেন যৌবন-আদর্শ-শক্তি-সম্ভ্রম-প্রেম-নারী। নাটকের টানে তিনি সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ছেড়েছেন। দীর্ঘ ৪৫ বছরের অভিনয় জীবন পার করে ৬৮ বছরের অভিনেতা মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তার নিঃসহায় জীবন সত্য প্রকাশ পেয়েছে তারই উক্তিতে-“মরবার সময় মুখে দু ফোঁটা জল দেওয়ার এমন কেউ নেই আমার।” থিয়েটার শিল্পে নিষ্ঠাবান এই শিল্পীর চরম একাকিত্বই তার চরিত্রের নিয়তি। নিঃস্ব, রিক্ত রজনীকান্ত বিগত দিনে সমস্ত বেদনা স্বাগত সংলাপে প্রকাশ পেয়েছে।
দ্বন্দ্বময় চরিত্র
রজনীকান্তের চরিত্রটি নাটকের দ্বন্দ্বময়। একদিকে শূন্য জীবনের হাহাকার অন্যদিকে প্রতিভাবলে জয় করতে যাওয়ার জড়া-ব্যাধি-মৃত্যু। একদিকে অতীত গৌরব, অন্যদিকে ‘দেহপট সনে নট সকলি হারায়’ -এই ধ্রুব সত্য। এই দুই সত্যের দ্বিধায় তিনি ওরঙ্গজেবের মতো গ্লানিময়, ওথেলোর মতো সব হারানো ব্যক্তি। বলা বাহুল্য, এই দ্বন্দময় চরিত্রটি তার বংশমর্যাদা সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন ছিলেন-” রাডঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাহ্মণ বংশের জন্মেছিলুম।”
উপসংহার
জীবনের রজনীকান্ত কে শিখিয়েছে অভিনেতা সামাজিক সম্মান নেই, তার কেবল ‘খদ্দের’দের আনন্দ দেওয়া। তার শুধুমাত্র ‘ক্লাউন’ ,’চাকর’ । তবু শিল্পের দায় অভিশপ্ত সিসিফাসের মতো তিনি আমৃত্য বহন করে চলেছেন। প্রতিবাদী ও যে এ সত্য বদন হবে না, নাটকের শেষে তিনি যা বুঝেছেন। করোনা বাসনাই তাকে সর্বরিক্ত করেছে, মিতু ছাড়া তার মুক্তি নেই।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর