সংলাপ প্রয়োগ
নাটকের মূল অংশ তার সংলাপ। নাটকের প্রেক্ষিত, চরিত্র ও কাহিনী অনুযায়ী সংলাপ তৈরি হয়। আজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাঙ্ক নাটক ‘ নানা রঙের দিন’ এ সংলাপ মুখ্যত দুটি পর্বে বিভক্ত। সূচন থেকে কালিনাথের মঞ্চে প্রবেশের আগে পর্যন্ত এই নাটকের সংলাপ মূল চরিত্র রজনী চাটুজের স্বর্গতোক্তি কেন্দ্রিক। কালীনাথের আগমনের পর থেকে এ নাটকের সংলাপ একোক্তি বা monologue । দীর্ঘ ভাষণের কালীন আজকে সাক্ষী রেখে রজনীকান্ত নিজের সুখ-দুঃখ অতীত-বর্তমানকে বিবৃত করে গিয়েছেন।
সংলাপের সার্থকতা
দুই প্রকারের সংলাপ প্রয়োগ নাটকটির মূল বক্তব্য, চরিত্র গঠন বৈশিষ্ট্য প্রকাশের সহায়তা করেছে। বেশ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যের আঁধারে সংলাপ গঠনের সার্থকতা নির্ণয় করা যেতে পারে-
(ক) নাগরিক কথ্য চলিত ভাষার স্বচ্ছ, সাবলীল প্রয়োগ। (‘বারোটা বেজে গেছে আমার-‘।)
(খ) ছোট ছোট সরল বাক্য ব্যবহার। (‘কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে।’)
(গ) বাংলার সঙ্গে ইংরেজি শব্দের মিশ্রণ। (‘stage-এর ওপর এসে দাঁড়ালুম, থিয়েটার-এর Black-Wall-এর দিকে তাকালুম,’)
(ঘ) প্রয়োজনে অন্যান্য নাটকের অংশ হুবহু তুলে নাট্য চরিত্র ও আখ্যানকে বাস্তব ধর্মীয় বিষয়ের উপযোগী করার প্রয়াস।
(ঙ) ভাষ্য পাঠের মতো সহজ বিবরণ ধর্মী সংলাপ ও রজনীকান্তের অতীত জীবনকে প্রকাশ ও বর্ণনা করেছে।
(চ) কালীনাথের সংলাপে সমাজ সংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের সত্য চরিত্রের প্রকাশ। (‘আপনি বামুন মানুষ, মিছে কথা বলবো না-‘)
(ছ) সংলাপের গুণে নাটকীয় অভিঘাত সৃষ্টি হয়েছে। (‘সব মিলিয়ে যেন একটা শ্মশান, যেন ওর দেওয়ালে কালো কালো অঙ্গারের লেখা আছে জীবনের শেষ কথাগুলো-…’)
উপসংহার
এ ধরনের বহুমাত্রিক প্রয়োগে ছোট ছোট গতিময় সংলাপ নাটকটিকে সার্থকতা দিয়েছে। অভিনয়ের প্রতিযোগিতায়, বর্ণনায় সাবলীলতায়, চরিত্র-নাট্যদ্বন্দ্ব সৃষ্টিতে, সর্বোপরি নাট্যকারের উদ্দেশ্য পূর্ণ করায় এ নাটকের সংলাসৃজন সার্থক হয়ে উঠেছে।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর