“ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ এবং ‘ধুলোর কলঙ্ক’ শব্দগুচ্ছ ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কোন বিশেষ তাৎপর্যে ব্যবহৃত হয়েছে, তা আলোচনা করো?

নাগরিক কবি সমর সেনের ‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ‘ এবং ‘ধুলোর কলঙ্ক’ শব্দগুচ্ছ দুটি বিশেষ তাৎপর্যবাহী। আলোচ্য কবিতায় ‘মহুয়ার দেশ’-এর আপাত রোম্যান্টিকতার আড়ালে যে কঠোর বাস্তব লুকিয়ে রয়েছে, তাই প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবি।

‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’-এর তাৎপর্য

কবিতাটি প্রথম পর্যায়ে কোভিদ নগর জীবনের সন্ধ্যাস সৌন্দর্যের বর্ণনা করতে গিয়ে সেই সৌন্দর্যের বাতাবরণ দূষণের প্রাদুর্ভাব বোঝাতে ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ‘ শব্দগুচ্ছ টি ব্যবহার করেছেন। অস্তগামী সূর্যের স্বর্ণালী আলোর আভাস যখন জলতলে নির্মিত হয় ‘উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ’, আর সেই আলোই যখন জলের উপর ভাসমান ফেনায় লাগিয়ে দেয় আগুনের রং, তখন শহরের এই সন্ধ্যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায় কবি মন। তবে এই মুগ্ধতার সুদূর প্রসারিত হতে পারেনা শহরে দূষিত পরিবেশে। ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতো’ ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ ‘ঘুরে ফিরে ঘরে’ এসে কবির সৌন্দর্য উপভোগ বিচ্ছেদ ঘটায়।

‘ধুলোর কলঙ্ক’-এর তাৎপর্য

কবিতায় দ্বিতীয় পর্যায় কবি খুব কাছ থেকে মহুয়ার দেশের মানুষের জীবন যন্ত্রণাকে প্রত্যক্ষ করেন। প্রকৃতির উদার সান্নিধ্যে ও সেখানের মানুষ সরল জীবন যাপন করতে পারে না। প্রগতির কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করতে হয় প্রকৃতিকে। শহরের দূষণ পূর্ণ পরিবেশ থেকে অনেক, অনেক দূরের মহুয়ার দেশ চলে গিয়েও বসতে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না তাই। যেখানে ‘দেবদারূর দীর্ঘ রহস্য’ ‘সমস্তক্ষণ’ ‘পথের দু’ধারে ছায়া’ফেলে, সেখানেই পুঁজিবাদী সভ্যতার দাপটে কয়লা খনির শ্রমিকদের রাত জাগা চোখ ভরা থাকে দুঃস্বপ্নে। তাদের বেঁচে থাকার পরিবেশ ও দূষিত করে দেয় ধনতন্ত্রের থাবা। তাই তাদের গায়ের লেগে থাকে ‘ধুলোর কলঙ্ক’।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment