“থিয়েটারে দেওয়ালে দেয়ালে অঙ্গারের গভীরে কালো অক্ষরে, আমার জীবনের ৪৫ টা বছর”- বক্তার ৪৫ বছরের জীবন যন্ত্রণার ইতিহাসে পরিচয়টুকু তুলে ধরো ?

অভিনয়ের প্রতি সুতীব্র ভালবাসা

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্ক নাটকটিতে এক বৃদ্ধ অভিনেতার করুন জীবনলেখ্য ফুটিয়ে তুলেছেন। একসময় রজনীগন্ধা চট্টোপাধ্যায় থিয়েটারের অন্যতম প্রধান অভিনেতা ছিলেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর অভিনয় ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান-স্বপ্ন-বেঁচে থাকা-মুক্তি। অভিনয়ের জন্য ব্যক্তি জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য-স্বজন, এমনকি প্রেমও বিসর্জন দিতে তিনি দ্বিধা করেননি। যৌবন-আদর্শ-শক্তি-প্রেম উৎসর্গ করে তিনি অবিচল থেকেছেন নাট্যাভিনয়, মনে করে এসেছেন থিয়েটারি পবিত্র শিল্প। কিন্তু আজ তিনি উপলব্ধি করেছেন জীবনের চরম সত্যকে, বাস্তবকে।

জীবন যন্ত্রণার ইতিহাস

এককালে দাপুটে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বর্তমান জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছেছেন। ৬৮ বছরের এই বৃদ্ধ অনুভব করেছেন ‘দেহ পথ সনে নট সকলি হারায়।’ এ পৃথিবীতে তিনি একা। তার আপনজন বলতে কেউ নেই। ধুধু করা দুপুরে জ্বলন্ত মাঠে বাতাসের মতো তিনি নিঃসঙ্গ। আদর করে কথা বলার, এমনকি সে সময়ে মুখে জল দেওয়ার মানুষ ও নেই তার সঙ্গে। অথচ তিনিও হাত পা ওয়ালা এক জলজ্যান্ত মানুষ। তারো শিরায় শিরায় সৎ বংশের প্রবৃত্ত রক্ত বইছে। রায়ের ব্রাহ্মণ রজনীকান্ত অভিনয়ে আসার আগে ছেলের ইন্সপেক্টর অফ পুলিশ।

শরীরে শক্তি, মনে সাহস, চার দ্বিগুণ কাজ করার ক্ষমতা, কাউকে পরোয়া না করার মানসিকতা ছিল তার। কিন্তু আজ নামডাক, খ্যাতি, প্রতিপত্তি সব হারানো এক অসহায় মানুষ তিনি। জীবনের ভালো দিনগুলো আজ ফুরিয়েছে, কোনভাবেই তা ফিরে আসবেনা। এ একাকী তার নিয়তি, আমৃত্যু যা তাকে বহন করতে হবে। এই যন্ত্রণার কথাই তিনি মঞ্চের ঘন অন্ধকারে দেখেছেন। তার মনে হয়েছে এজন্য শ্মশানের দেয়ালে কালো অঙ্গারে লেখা জীবনের শেষ কথা, ৪৫ বছরের ইতিহাস।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment