তাদের দেখা যাচ্ছে না কেন | এদের কাউকে দেখছি না | হাতি পাকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে | বুড়ি উঠে বসে

“বুড়ি উঠে বসে!” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বুড়ির উঠে বসার কারণ লেখাে

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোট গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃত মন্তব্যটিতে ডাকাত সর্দার সৌখীর বিধবা মার কথা বলা হয়েছে।

কোনাে এক শীতের রাতে সৌখীর মা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল। সেই সময় বাইরে নােনা আতা গাছতলায় শুকনাে পাতার একটা খড়খড় শব্দ শুনতে পায় সে। প্রথমে তার মনে হয় যে, হয়তাে বা এটা গন্ধগােকুলের বা শেয়ালের ঘুরে বেড়ানাের আওয়াজ। ভাবে, ওরা হয়তাে কিছু খেতে এসেছে। সেসময় সৌখীর মার খুব শীত করতে লাগল। এ প্রসঙ্গেই তার গায়ে দেওয়া পুরােনাে কম্বলটার বয়স যখন সে হিসেব করছিল, তখনই একটা টক্ট শব্দ তার কানে আসে। টিকটিকির ডাক মনে করে টিকটিকিটার প্রতি বিরক্তিও প্রকাশ করে সে। মনে মনে বলে, “হাতি পাঁকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে। টিকটিকিটা সুধু খুনসুড়ি আরম্ভ করেছে মজা দেখবার জন্য। করে নে।” এরপরই টিনের কপাটের ওপর টোকা মারলে যেরকম শব্দ হয়, দরজায় ঠিক সেইরকম দুটো টোকার শব্দ শুনতে পায় সৌখীর মা। সৌখীর মা এবার সেই খখনে শব্দ শুনে বুঝতে পারে যে, আগের শব্দটিও সে ক্ষেত্রে টিকটিকির আওয়াজ ছিল না। ডাকাতের মা হিসেবে দরজায় টোকার শব্দ সম্পর্কে সে সর্বদা অতি সচেতন। সুতরাং বহিরাগত কেউ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অনুমান করেই বুড়ি এরপর বিছানা ছেড়ে উঠে বসে।

“হাতি পাকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে।” -বক্তার একথা বলার কারণ প্রসঙ্গসহ আলােচনা করাে।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা ছােটোগল্প থেকে গৃহীত আলােচ্য স্বগতোক্তিটি ডাকাত সর্দার সৌখীর বিধবা মায়ের।

এক শীতের রাতে সৌখীর মা যখন কম্বল মুড়ি দিয়ে একাকী শুয়েছিল, তখনই বাড়ির উঠোনে নােনা আতা গাছতলায় শুকনাে পাতার একটা খড়খড় শব্দ শুনতে পায় সে। গন্ধগােকুলের বা শেয়ালের ঘুরে বেড়ানাের আওয়াজ বলে তাকে প্রাথমিকভাবে মনে করে সে। ভাবে যে, ওরা হয়তাে কিছু খেতে এসেছে। সেসময় সৌখীর মার খুব শীত করতে লাগে। এ প্রসঙ্গেই তার গায়ের পুরােনাে কম্বলটার বয়স যখন সে হিসাব করছিল, তখনই একটা টক্ শব্দ তার কানে আসে। এই ডাকটা শুনে তাকে টিকটিকির ডাক বলে মনে করে সৌখীর মা। টিকটিকিটা তার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটাল বলে হতাশ সৌখীর মা ভাবে যে, টিকটিকিও যেন তার দুঃসময়ের সুযােগ নিয়ে তার সঙ্গে মশকরা করছে। সৌখীর মায়ের দুঃসময়ের কারণ মূলত দুটো। প্রথমত, ছেলে সৌখী ডাকাতির দায়ে জেলে বন্দি, দ্বিতীয়ত অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে সে তার নাতি ও বউমাকে বেয়াই বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। সৌখীর মা এই ভেবে হতাশ হয় যে, তার সঙ্গে টিকটিকিও মশকরা করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার খেদপূর্ণ স্বগতােক্তি, হাতি পাঁকে পড়লে ব্যাং পর্যন্ত তাকে লাথি মারে।

“এদের কাউকে দেখছি না।” -কে, কাকে কাদের কথা জিজ্ঞাসা করেছে? তাদের সম্পর্কে সৌখীর কোন্ মনােভাবের প্রকাশ দেখা যায়?

সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা ‘ডাকাতের মা’ গল্পে জেল থেকে মেয়াদের পূর্বে ছাড়া পেয়ে রাতদুপুরে বাড়ি ফিরেই সৌখী তার মাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছে। এখানে এদের বলতে সৌখীর ছেলে, বউয়ের কথা বলা হয়েছে।

সৌখীর এটা দ্বিতীয় পক্ষের বউ। প্রথমপক্ষের সন্তান নেই। তাই বােঝা যায় সন্তানের জন্য সে কতটা উদগ্রীব। জন্ম থেকেই সে তার ছেলেকে দেখেনি জেলে বন্দি থাকার জন্য। এদিকে পূর্বের মতাে ডাকাতদের সহৃদয়তা না থাকায় সৌখীর মায়ের সহজে দিন চলে না। কোনােরকমে খইমুড়ি বেচে সে তার নিজের পেট চালায়। আবার ডাকাতের মা বা ডাকাতের বউ বলে কেউ সাহস করে তাদের ঝি-এর কাজও দেয় না। সৌখীর দ্বিতীয়পক্ষের বউয়ের শরীর দুর্বল, ছেলের জন্মের কারণে রুগ্ণ। তাই তাদের যত্ন না করতে পেরে সৌখীর মা তাদেরকে তার গােয়ালা বেয়াই এর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই সৌখী ঘরে ফিরে তাদেরকে দেখতে পায়নি। এতে তার বাড়ি ফেরার আনন্দ এক মুহূর্তে নিঃশেষ হয়ে যায় আর সে মনে মনে ঠিক করে যে পরের দিন সকালেই সে তাদের আনতে যাবে।

“তাদের দেখা যাচ্ছে না কেন?” -সে কথা কেন সৌখীকে সব খুলে বলা যাচ্ছে না?

সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা ‘ডাকাতের মা’ গল্পে যে ডাকাতের পরিচয় পাওয়া যায় তার নাম সৌখী। তার বাবাও পেশাগতভাবে বড় ডাকাত ছিল। তাই তার মা, বউকে বিশ্বাস করে কেউ কাজও দেয় না আবার সাহায্যও করে না। এদিকে পাঁচ বছর আগে সৌখী ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। তাই সে আজ জেলে। জেল থেকে জেলারের রেমিশন পেয়ে মেয়াদ শেষের আগে বাড়ি ফিরেও সে তার ছেলে, বউকে দেখতে পায় না। কারণ সংসারের অভাব-অনটনে পেট চালাতে না পেরে তার মা নাতিবউমাকে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সে কথা বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই সৌখীর মা তাকে জানায়নি। কারণ সন্তানের প্রতি সৌখীর খুব টান। তাদের ছেড়ে সে এক মুহূর্ত থাকতে পারবে না। তাই পরেরদিনই তাদের আনতে দৌড়ােবে বলে মনস্থির করে সৌখী। আবার দলের বেইমানির খবর পেলে হয়তাে তখনই তাদের সঙ্গে বােঝাপড়া করতে ছুটবে। তাই বহুদিন পরে আপন সন্তানকে কাছে পেয়ে সৌখীর মা তার সন্তানের সুখ হারাতে চায়নি। সৌখী হয়েছে ঠিক তার বাবার মতাে মরদ। অল্পেতেই মাথায় রাগ চড়ে যায়। তখন রাগের মাথায় কী করে ফেলে ঠিক থাকে না। তাই মা তাকে কিছুই জানাতে চায়নি, ‘মেয়েদের কি বাপের বাড়ি যেতে নেই’ বলে এড়িয়ে গেছে।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment