তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য শিক্ষা

১৫ (৩) নং ধারা এই ধারায় বলা হয়েছে, নারী ও শিশুদের শিক্ষার জন্য রাষ্ট্র বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রণয়ন করতে পারে।

৪৬ নং ধারা সংবিধানের এই নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে রাষ্ট্র সমাজের দুর্বল শ্রেণি বিশেষত তপশিলি জাতীয় তপশিলি উপজাতিদের শিক্ষায় এবং উন্নতির যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং তাদের সব প্রকার সামাজিক অবিচার ও শোষণ থেকে রক্ষা করবে।

সংবিধানের বিভিন্ন ধারা সম্বন্ধে কোঠারি কমিশনের অনুমত

কোঠারি কমিশনের শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সংবিধানের কতগুলি ধারা সম্পর্কে আলোচনা ও সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন।

৪৫ নং ধারা সংবিধানের ৪৫ নং ধারায় বলা হয়েছে সংবিধান চালু হওয়ার ১০ বছর মধ্যে 14 বছর বয়স পর্যন্ত দেশের সকল ছেলেমেয়েদের শিক্ষাকে অবনৈতিক বাধ্যতামূলক করতে হবে। অর্থাৎ, ১৯৬০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারেননি। সংবিধানের এই নির্দেশ কেন পূরণ করা সম্ভব হলো না সে সম্পর্কে কমিশন কয়েকটি কারণে উল্লেখ করেছেন।

১ সংগতির অভাব:- লক্ষ্য পূরণের জন্য যে ধরনের সঙ্গতি বা প্রয়োজনীয়র সম্পদে দরকার ছিল তার অভাব ছিল।

২ দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি:- দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধি করনের লক্ষ্যে পৌঁছানোটা অতটাও সহজ সাধক হয়ে উঠতে পারেনি।

৩ নারী শিক্ষা বাধা:- এই কারণে মধ্যে বড় একটি কারণ হলো নারীদের শিক্ষার নামে দিক থেকে শিক্ষার পথে বাধা দেওয়ার জন্য কিন্তু এই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

৪ দারিদ্রতা:- অত্যাধিক পরিমাণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি দারিদ্রতা অধিক পরিমাণ বাড়তে থাকে, এবং দারিদ্রতা কে ছাড়িয়ে এই সমস্ত নিয়ম কানুন গুলো পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

৫ অধিক ছেলেমেয়ে:- পিছিয়ে থাকা শ্রেণীর অতি সন্তান থাকায় সবাইকে শিক্ষা দিতে অগ্রগতি করানো সম্ভব হয়নি।

৬ নিরক্ষর পিতা-মাতা:- নিরক্ষর পিতা মাতার শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় তাদের সন্তানদের মধ্যে অগ্রহার দেখা সম্ভব হয়নি।

সংবিধানের লক্ষ্য পূরণে কমিশনের সুপারিশ

সংবিধানের নির্দেশের লক্ষ্য পূরণের কমিশনের সুপারিশ গুলি হল নিম্নরূপ-

১ সুসংহত পরিকল্পনা দেশের প্রতিটি রাজ্যে এমনকি প্রত্যেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির জন্য স্থানীয় সমস্যা ও পরিস্থিতি এবং অন্যান্য সকল দিক খতিয়ে দেখে সুসংহত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ এখানে বলা যেতে পারে প্রথমে সমস্যা সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

২ পর্যাপ্ত অর্থের ব্যবস্থা অর্থের অভাবে কোনো অঞ্চলের কাজ যাতে বাধা প্রাপ্ত না হয় সেই জন্য রাজ্য ও যেগুলোকে পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য করতে হবে।

৩ কার্যকারী শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা কমিশনের সুপারিশ হলো ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে দেশের সব অঞ্চলগুলিতে পাঁচ বছরের এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে ৭ বছরের কার্যকরী শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪ অপচয় কমিশন অযথা কোন অর্থ ব্যয় না করা হয় সেদিকে যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার উদ্দেশ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করার সুপারিশ

১ প্রতিটি শিশুর বাড়ির স্বল্প দূরত্বের মধ্যে বিদ্যালয় স্থাপন করার ব্যবস্থা করতে হবে।

২ প্রতিটি শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করতে হবে, তা না হলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে

৩ প্রতিটি শিশু যাতে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত পড়া চালিয়ে দিতে পারে তার সুব্যবস্থা করতে হবে।

৪৬ নং ধারায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি বিশেষ করে তপশিলি জাতি ও তপশিলির উপজাতিদের শিক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশ রাখা হয়েছে। কমিশনও এই সব শ্রেণীর মানুষদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে।

তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতিদের শিক্ষার জন্য ইউ. এন. ধেবরের সভাপতি কে একটি কমিশন গঠন হয়েছিল। এই কমিটি যে সকল সুপারিশ করেছিল তা কোঠারি কমিশন মেনে নিয়ে বলেছিলেন-

১ শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি তপশিলি জাতি ও উপজাতি যে সকল শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে তা আরো অত্যাধিক পরিমাণে বৃদ্ধি ঘটাতে হবে।

২ আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন তপশীল জাতীয় তপশিলি উপজাতি মানুষদের অঞ্চলে আশ্রম বিদ্যালয়ে স্থাপন করতে হবে যা তাদের শিক্ষাতে অনেকটাই উন্নত ঘটাবে।

৩ ছাত্রবাসের সুবিধা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় চলাকালীন শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য ভালো ছাত্র বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪ বৃত্তির ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের ছাত্র অবস্থায় পড়াশোনার জন্য বৃত্তি বাড়াতে হবে।

৫ বৃত্তির কর্মসূচি বিকেন্দ্রীকরণ বৃত্তি প্রদানের কর্মসূচি বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।

৬ বিশেষ শিক্ষাদানের ব্যবস্থা জাতি ও তপশিলী উপজাতি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বিশেষ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৭ কর্মরত বেসরকারি সংস্থাকে উৎসাহদান পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলিতে যে সকল বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে তাদের কাজের উৎসাহ দিতে হবে।

৮ সরকারি স্তরে বিশেষ পথ তৈরি তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে কাজ করার জন্য সরকারি স্তরে বিশেষ পথ তৈরি করতে হবে এবং পদে যোগ্য ব্যক্তির আকর্ষণীয় বেতন দিতে হবে।

৯ বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা উপজাতিদের অঞ্চলে শিক্ষকতা কাজের নিযুক্ত ব্যক্তিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করতে হবে।

৩০ নং ধারা সংবিধানের ৩০ নং ধারায় ধর্ম ও ভাষার জন্য শিক্ষার কোনো প্রকার বৈষম্য থাকবে না বলা হয়েছে। কোঠারি কমিশন ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালের মধ্যে এটিকে সমর্থন করেছেন।

২৮ নং ধারা ধারায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার হবে না বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় কমিশন এই নির্দেশ মেনে নিয়ে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ শিক্ষকের গুরুত্ব দিয়েছেন।

সুতরাং, সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় শিক্ষার উন্নতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এবং শিক্ষা সম্পর্কে সবার অধিকারী যাতে সুরক্ষিত থাকে সংবিধানের তার সুব্যবস্থা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই সংবিধান কে বলা হয় একটি দেশের ভাষা, লিপি, সংস্কৃতি সংরক্ষণের রক্ষাকবচ এবং উন্নয়নের হাতিয়ার।

দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর

ভারতের সংবিধানের ভূমিকা ও তার বৈশিষ্ট্য

Leave a Comment