ডাকাতের মা গল্প অবলম্বনে সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিচয় ও সৌখীর জেলজীবনের পরিচয় | ‘ডাকাতের মা’ গল্প অবলম্বনে মাদীন পেশকার এবং বাসনওয়ালার সাক্ষাৎকার

‘ডাকাতের মা’ গল্প অবলম্বনে মাদীন পেশকার এবং বাসনওয়ালার সাক্ষাৎকার নিজের ভাষায় লেখাে

সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা ছােটোগল্পে মাতাদীন পেশকার ভােরে উঠে তার লােটাটি খুঁজে না পেয়ে থানায় যান এবং থানা থেকে ফেরার পথে নতুন লােটা কিনতে বাজারে যান এক বাসনওয়ালার দোকানে। কিন্তু বাসনওয়ালার দেখানাে কোনাে ঘটিই পেশকারসাহেবের পছন্দ হয় না। খুঁতখুঁতে পেশকারসাহেব চান বড়াে মুখযুক্ত, খুরাে দেওয়া এমন এক লােটা যাতে কোনাে স্বাস্থ্যবতী মহিলা একটা মােটা রুপাের বালা পরা অবস্থাতেও ভেতরে হাত ঢুকিয়ে তা মাজতে পারবে। এরপর বাসনওয়ালা তাকে কম দামে, মাত্র আড়াই টাকায় একটি পুরােনাে লােটা দেখায়। লােটাটি দেখেই পেশকারসাহেবের সন্দেহ হওয়ায় তিনি পকেট থেকে চশমা বের করে লটাটি ভালাে করে আবার পরীক্ষা করেন এবং নিশ্চিত হন যে, সেটি তাঁরই নিখোঁজ লােটা-রূগে উত্তেজিত হয়ে আইনজ্ঞ মানুষটি তাই হিতাহিত-জ্ঞানশূন্য হয়ে বাসনওয়ালার গলা টিপে ধরেন। এই কটুবাক্যও তাকে বলেন যে, সে দিনে দোকানদারি করে, আর রাতে সিঁধকাঠি নিয়ে চুরি করতে বের হয়। ভীত-সন্ত্রস্ত বাসনওয়ালা তখন মাতাদীনকে জানায় যে, কিছুক্ষণ আগেই সে সৌখীর মায়ের কাছ থেকে চোদ্দো আনা নগদ পয়সায় লােটাটি কিনেছে। মাতাদীন তা শুনে তাকে জানান যে, মাত্র চোদ্দো আনায় ওই মূল্যবান লােটা কখনােই কিনতে পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি জানান যে, বাসনওয়ালা চোরাই মাল জেনেই কিনেছে। চোরাই মাল রাখার আইনি বিধি সে জানে কি না—সে কথাও ক্রুদ্ধ পেশকারসাহেব বাসনওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করেন তখন। এরপরই পেশকারসাহেব দারােগাসাহেবকে খবর পাঠান।

রাতবিরেতে সৌখীদের বাড়িতে ঢােকার আগে বহিরাগত ব্যক্তি দরজায় কীভাবে টোকা দিয়ে তার পরিচয় জ্ঞাপন করত তা ডাকাতের মা ছােটোগল্প অবলম্বনে লেখাে। গল্প অনুসারে ডাকাত সর্দার সৌখীর অনুচরদের পরিচয় দাও।

সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা ছােটোগল্পটি প্রকৃতপক্ষে ডাকাত সর্দার সৌখী ও তার মায়ের গল্প। সৌখীর দলে তার বাবার আমলের মতাে, বিশ্বাসী এবং দল-অন্ত-প্রাণ অনুচর নেই। আর সে কারণেই সৌখীকে তার বাড়ির দরজায় টোকা দেওয়ার ধরন মাঝেমধ্যেই পালটাতে হয়। টকটক করে দু-টোকার শব্দ থেমে থেমে তিনবার হওয়ার অর্থ হল দলের অনুচরেরা টাকা দিতে এসেছে। টোকার শব্দ চারবার হলে বুঝতে হবে, সৌখী নিজে বাড়ি এসেছে। অবশ্য মায়ের প্রতি সৌখীর কড়া নির্দেশ ছিল—সাংকেতিক টোকার সংখ্যা তার জানা সংখ্যার সঙ্গে মিলে গেলেও অন্তত দশবার নিশ্বাস ফেলার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেই যেন সে দরজা খােলে।

গল্প অনুযায়ী দেখা যায়, পাঁচ বছর আগে সৌখী জেলে গেলে তার অনুচরেরা প্রথম দুবছর ধরে প্রতি মাসে তার মাকে টাকা দিয়ে গেলেও তারপর থেকে তারা বেপাত্তা হয়ে যায়— মা সৌখীর বাবার আমলে ছিল কল্পনাতীত। এর আগেও সৌখী দু বার জেলে গেলেও এমন ঘটনা ঘটেনি। সৌখীর মায়ের অভিমত, ওরা ‘ডাকাত’ নামেরই যােগ্য নয়, ছিচকে চোর হিসেবেই ওদের মানায়। যে লােকটা সৌখীর মাকে টাকা দিতে আসত, তার চিবুকের নীচে দুগাছা দাড়ি, মুখে কালি-ঝুলি, হাতে মশাল থাকলেওঅমন রােগা-পটকা তালপাতার সেপাই-কে দেখে কেউই ভয় পাবে না। সুতরাং সিদ্ধান্ত করা যায়, সৌখীর অনুচর ভাগ্য খুব একটা ভালাে ছিল না।

ডাকাতের মা গল্প অবলম্বনে সৌখীর জেলজীবনের পরিচয় দাও।

সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা ছােটোগল্পে সৌখী মােট তিনবার জেলে গেছে। আগের দু-বারই জেল থেকে ফেরার সময় তার ডাকাত বাবার মতাে তারও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছিল। অবশ্য, শেষবার বাড়ি ফেরার পর দেখা যায়, সৌখী বেশ রােগা হয়ে গেছে এবং তার চুলেও পাক ধরেছে। জেলজীবনে সৌখী ডাকাতসুলভ আভিজাত্য নিয়েই চলত-খুনের আসামি বা যাবজ্জীবনের আসামীদের সঙ্গে কথা বললেও ছিচকে কদু চোর দের সঙ্গে পারতপক্ষে কথা বলত না সে। তৃতীয়বারের জেলজীবন সংক্ষিপ্ত করার জন্য প্রধান জমাদারকে সৌখী ঘুষ দিয়েছিল, যাতে ওই জমাদার জেলরসাহেবের কাছে সৌখীকে আগে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। লাটসাহেব জেলখানায় পরিদর্শনে এলে জেলর তার কাছে সৌখীর কাজকর্মের প্রশংসা করলে খুশি হয়ে লাটসাহেব তাকে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি দেন। জেলে ঠিকাদারের কাজ করে নব্বই টাকা উপার্জনও করেছিল সে। তবে জেলজীবনে ঘড়ি ধরে ভােরবেলা ওঠাটা তার না-পসন্দ ছিল। অবশ্য শেষবারের জেলজীবনে একটাই দুঃখ ছিল তার। ছেলে ছেলে করে মরা সৌখী প্রথম ছেলের মুখ দেখে জেলে যাবার কিছুদিন পরই। তাই শেষ জেলজীবনের অনেকটা সময় তার কেটেছিল তার না-দেখা-ছেলের কথা ভেবেই।

ডাকাতের মা গল্প অবলম্বনে সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিচয় দাও।

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ গল্পের একটি অপ্রধান চরিত্র হল গয়লা বাড়ির মেয়ে এবং বউ সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রী। সৌখীর সঙ্গে বিয়ে হবার পর স্বামী শাশুড়ি নিয়ে সে হয়তাে সুখেই ছিল। কিন্তু গর্ভবতী হবার পরই তার ডাকাত সর্দার স্বামী জেলে যায়। ফলে স্বামীর অনুপস্থিতিতেই তার ছেলে হয়। এমনকি ছেলেকে বড়ড়াও করে তুলতে হয় তাকে। এমনিতেই সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রীর চেহারা ছিল খুব শীর্ণ অর্থাৎ ‘রােগা-রােগা’। তার ওপর, পুত্র জন্মের পর একেবারে ভেঙে যায় তার শরীর। সৌখীর শ্বশুরমশায়ের দুটো মহিষ থাকায় মা ও ছেলের উপযুক্ত খাবারের জন্যেই তার শাশুড়িমা তাকে সন্তানসমেত বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রী মনের দিক দিয়ে ভালাে ছিল বলেই শাশুড়ির সঙ্গে তার বেশ সুসম্পর্ক বজায় ছিল। শাশুড়ির ভাবনার মধ্যে আমরা তারই প্রমাণ পাই—“নইলে আমার কি ইচ্ছে করে না যে বউ-নাতিকে নিয়ে ঘর করি।…..আর বছরখানেক বাদেই তাে সৌখী ছাড়া পাবে। তখন বউকে নিয়ে এসে রুপাের গয়না দিয়ে মুড়ে দেবে।” গল্পের ধারা থেকে একথা মনে হয় যে, বংশের প্রদীপ পুত্র-সন্তানের জন্ম দেওয়ায় সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রী তার স্বামী ও শাশুড়ির ভালােবাসা আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment