টমাস হবসের রাষ্ট্রদর্শন আলােচনা করাে। হবসের রাষ্ট্রদর্শনের সীমাবদ্ধতা ও গুরুত্ব লেখাে।

সূচনা: ইংরেজ দার্শনিক টমাস হবস (১৫৮৮-১৬৭৯ খ্রি.) আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। সামাজিক চুক্তি মতবাদের অন্যতম সার্থক প্রবক্তা ছিলেন তিনি। তিনি বলেন”রাষ্ট্র হল যন্ত্র এবং রাষ্ট্রে বসবাসকারীরা নিয়মশৃঙ্খলায় আবদ্ধ।” যন্ত্রের গতি নিয়ে রাষ্ট্র চলমান আর তার সঙ্গে সঙ্গে চলমান মানুষ এবং তার কর্মকাণ্ড।

হবসের রাষ্ট্রদর্শন

[1] রচিত রাষ্ট্রগ্রন্থসমূহ: হবসের লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থটি হল লেভিয়াথান (Leviathan), যা তিনি ফ্রান্সে নির্বাসনে থাকাকালীন রচনা করেছিলেন। এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য আরও দুটিগ্রন্থ ছিল- ডিকরপােরে (De corpore) এবং ডি হােমাইন (De Homine)। লেভিয়াথান গ্রল্থে হবসের রাষ্ট্রচিন্তার বিশদ বিবরণ রয়েছে।

[2] রাষ্ট্রচিন্তার ধারা

  • সামাজিক চুক্তি মতবাদ
  • মূল বক্তব্য: হবসের ধারণায় সামাজিক চুক্তির মধ্যে দিয়েই রাষ্ট্র নামে যন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন সমাজ গড়ে ওঠার আগে মানুষ প্রকৃতির কোলে জীবন কাটাত। কিন্তু প্রকৃতির রাজ্যের অনিশ্চয়তা এবং দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় মানুষ চুক্তির দ্বারা সমাজ গঠন করল। যাবতীয় প্রাকৃতিক অধিকার সার্বভৌম শাসকের হাতে অর্পণ করল।
  • প্রকৃতির রাজ্য: হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রকৃতির রাজ্য (State nature)। হবসের ধারণায় সমাজ গঠনের আগে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করত। প্রকৃতির এই রাজ্য ছিল ভয়াবহ এবং অসহনীয়। এই প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকত। বলবান দুর্বলদের পরাজিত করত।
  • প্রাকৃতিক আইন: হবসের ধারণায় এই প্রকৃতির রাজ্যে সংঘাতপূর্ণ জীবনের জন্য প্রাকৃতিক আইনের প্রয়ােজন। হবসের মতে, প্রাকৃতিক আইন হল পারস্পরিক বিবেচনাপ্রসূত স্বাভাবিক কিছু পরামর্শ। অসহনীয় জীবনযাপন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে পারস্পরিক বিবেচনার মাধ্যমে মানুষ কিছু আইন তৈরি করে।
  • সার্বভৌমিক তত্ত্ব: হবসের ধারণায় সার্বভৌম ক্ষমতা হল, মানুষের এমন এক চূড়ান্ত ক্ষমতা, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষরাষ্ট্রের এবং জনসাধারণের নিরাপত্তারক্ষা করেন। সার্বভৌমত্বের প্রধান উদ্দেশ্য হল—জনস্বার্থ রক্ষা করা।
  • ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ: হবসের চিন্তায় ব্যক্তি তার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সদা সচেষ্ট। রাষ্ট্র ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য নয়|ব্যক্তির নিরাপত্তা ও মঙ্গল সাধনই রাষ্ট্রের অন্যতম উদ্দেশ্য।

হবসের রাষ্ট্রদর্শনের সীমাবদ্ধতা ও গুরুত্ব

[1] সীমাবদ্ধতা: পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ভন, মারে, গেটেল প্রমুখ হবসকে রক্ষণশীল, যান্ত্রিক, গণতন্ত্র বিরােধী তত্ত্বের রূপকার বলেছেন। হবসের রাষ্ট্রতত্ত্বের সামাজিক চুক্তি ভ্রান্ত এবং তার প্রকৃতির রাজ্যতত্ত্ব কাল্পনিক। কেননা হবসের চুক্তিতত্ত্বে চুক্তি সম্পাদনকারী শুধুমাত্র একটি পক্ষ আছে, তা হল সাধারণ মানুষ বা জনসাধারণ। এতে শাসক বা অন্য কোনাে পক্ষ নেই। কিন্তু বাস্তবে চুক্তি হয় দুই বা ততােধিক পক্ষের মধ্যে। তাই হবসের এই চুক্তিতত্ত্ব অবাস্তব।

[2] গুরুত্ব: টমাস হবস ঐশ্বরিক তত্ত্বকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রকে মানবিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেছেন হবস। তাই লিও স্ট্রস হর্সকে “The originator of modern political philosophy” বলে উল্লেখ করেছেন।

History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)

Leave a Comment