ছােটোগল্প হিসেবে ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পের সার্থকতা আলােচনা করাে
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে আয়তনের সংক্ষিপ্ততা না থাকলেও সেখানে ছােটোগল্পের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বেশি চরিত্রের সমাগম ঘটেনি। পেলাইও, এলিসেন্দা, পাদরি গােনসাগা, প্রতিবেশিনী, ডানাওয়ালা বৃদ্ধ, মাকড়সা-কন্যা ছাড়া সেখানে রয়েছে কিছু জনতা-চরিত্র। ডানাওয়ালা বৃদ্ধ বা মাকড়সা-কন্যা কারােরই চরিত্রের পূর্ণ বিবর্তন এই গল্পে দেখানাে হয়নি।
যাজকতন্ত্র বা ধর্মতন্ত্রের অহংকারী চরিত্র, পিতামাতার অবাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপনের করুণ পরিণাম, সাধারণ মানুষের হুজুগ ও সংস্কারগ্রস্ত মনােভাব, পেলাইও-এলিসেন্দার ধান্দাবাজি ইত্যাদিকে উন্মুক্ত করতে ডানাওয়ালা বুড়ােকে আশ্রয় করে জাদু-বাস্তবতাকে প্রায় অস্ত্রের মতাে ব্যবহার করেছেন লেখক।
ছোট গল্পের সূচনা ও সমাপ্তি অংশ নাটকীয় হওয়া বানীয়। বৃষ্টির তৃতীয় দিনের বিবরণসমেত কিছুটা আচমকাই এই গল্পটি শুরু হয়েছে। গল্পের শেষেও রয়েছে চমক। অর্ধেক পালক খসা, কাদায় জট পাকিয়ে যাওয়া ডানাওয়ালা থুরথুরে বৃদ্ধ কিছুটা আকস্মিকভাবেই ডানা মেলে বাড়িগুলাের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
সব মিলিয়ে এই গল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল জাদুবাস্তবতার ব্যবহার। আপাত-অসম্ভবের মােড়কে লেখক বাস্তবকে যেভাবে বিধৃত করেছেন গল্পের পরতে পরতে, তাই ই এই গল্পের প্রাণ। তাই সব শেষে বলা যায়, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখা বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ অতি অবশ্যই একটি সার্থক ছােটোগল্পের অভিধা পেতে পারে।
“পড়ে থাকা শরীরটার দিকে তাকিয়ে তারা কেমন হতভম্ব হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল”- কারা ‘চুপচাপ’ দাঁড়িয়ে রইল? পড়ে থাকা ‘শরীরটার’ বিবরণ তােমার নিজের ভাষায় লেখাে।
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে পেলাইও-এলিসেন্দারা চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল।
কাদার মধ্যে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা থুরথুরে বুড়াের দিকে তাকিয়ে পেলাইও ও এলিসেন্দা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তার পরনে ছিল ন্যাকড়াকুড়ুনির পােশাক। টাক-পড়া চকচকে মাথায় বিবর্ণ কয়েকটি চুল অবশিষ্ট ছিল, ফোকলা মুখে দাঁত খুবই কম আর কখনও যদি তার কোনো জাঁকজমক থেকেও থাকে বর্তমানের করুণ দশায় সেসব উধাও হয়ে গিয়েছে। পিঠে আছে অতিকায় শিকারি পাখির ডানা যা নােংরা এবং অর্ধেকটাই পালক-খসা। কাদায় তা জট পাকিয়ে গিয়েছে। পেলাইও- এলিসেন্দা তাদের বিস্ময়ের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে যখন তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করল, তীক্ষ্ণ এক দুর্বোধ্য বুলিতে সে তার জবাব দিয়েছিল। বৃদ্ধের এই অবাস্তব এবং অসম্ভব, একইসঙ্গে জরাজীর্ণ চেহারাকে পেলাইও ও এলিসেন্দা প্রত্যক্ষ করেছিল।