‘চিত্রকলা’ বলতে কী বোঝো? প্রাচীন বাংলার চিত্রকলার সম্বন্ধে আলোচনা করো?

চিত্রকলা

চিত্রকলা হল বাস্তব রূপে কৃত্রিম প্রতিরূপ, যা কখনো ও রংতুলি, কখন‌ও পাথর-মাটি-ধাতু প্রভৃতির উপর মূর্ত করা হয়। এর মধ্যে নিহিত থাকে চিত্রকারের অভীপ্সা, মনের মাধুরী। অ্যারিস্টোটল তার ‘পোয়েটিক্স’ গ্রন্থের চিত্রকলার সহ সমূহ কলা শিল্পীকে বাস্তবে অনুকরণ বলে বর্ণনা করেছেন। আধুনিক শিল্প তাত্ত্বিকরা ও মনে করেন Art ফর্মটি ইমিটেশন।

প্রাচীন বাংলার চিত্রকলা

প্রাচীন বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস পর্যালোচনা বহুলাংশে অনুমান নির্ভর। কারণ রাজনৈতিক উত্থান পতন, প্রতিকুল আবহাওয়া এবং তথাকথিত অনুন্নত উপাদানের জন্য প্রাচীন চিত্রকলার কোন নমুনায় টিকে থাকেনি। বাংলার প্রাচীনতম ছবির নির্দেশন হিসেবে পাল রাজা প্রথম মহীপালের ৯৮৩-০৩৮ খ্রিস্টাব্দে আমলে নালন্দা মহাবিহারে লেখা ‘আষ্টাসহস্রিকা-প্রজ্ঞা পারমিতা’ নামক তাল পাতার পুঁথিতে বুদ্ধের বারোটি ছবিকে ধরা হয়। পাল রাজত্বেই বাঙালির চিত্রকলার প্রথম বিকাশ ঘটেছিল বলে ধরে নেয়া হয়। সেই সময় হরিতালের হলুদড়, খড়ি মাটি সাদা, উদ্ভিদ জাত গাঢ় নীল, প্রদীপের কালি, সিঁদুর লাল, আর নীল ও হলুদের মিশ্রণে তৈরি সবুজ রং ব্যবহৃত হত। ছবির প্রধান বিষয় ছিল গৌতম বুদ্ধের জীবনের প্রধান প্রধান ঘটনা। পাথর ও ধাতুর ভাস্কর্য রচনার ক্ষেত্রেও পাল যুগ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

তিব্বতের ঐতিহাসিক তারানাথের সপ্তদশ শতাব্দী ভারতবর্ষের বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থটির মাধ্যমে বাংলা চিত্রকলার প্রাচীন এই ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। তার গ্রন্থে বহিঃশত্রুর আক্রমণ, মাৎস্যন্যায় , রাষ্ট্রীয় সংঘর্ষ ও আবহাওয়ার কারণে বিনষ্ট হওয়া বাংলা চিত্রকলার আদি পূর্ব সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। বৌদ্ধ গ্রন্থ ‘দিব্যাভদানে’ ও খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে বাংলা চিত্রকলার উল্লেখ আছে। পূর্ব ভারতের পাল রাজত্ব স্থায়ী ছিল ৪০০ বছর। তাদের পূর্বের কোন চিত্রকলার নির্দেশন পাওয়া যায়নি বলে পাল চিত্রকলা কে বাংলার প্রাচীন চিত্রকলা ধরে নেওয়া যেতে পারে। একাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে পাল যুগের চিত্রকলা সংস্কৃতি ধারণাটি দুর্বল হয়ে পড়ে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment