“ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়/কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।” -তাদের চোখ কেন ঘুমহীন? তাদের দুঃস্বপ্নের কারণ কি? অথবা, “ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়/কিসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।” – কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের ঘুমহীন চোখে ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন হানা দেয় কেন?

যাদের চোখ ঘুমহীন

‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতা থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে মহুয়ার দেশের কয়লা খনির শ্রমিকদের ঘুমহীন চোখের কথা বলেছেন কবি সমর সেন। প্রগতির কাছে প্রকৃতি অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বলে, পুঁজিবাদী আগ্রাসনের মহুয়ার দেশের মানুষের অস্তিত্ব অবক্ষয়িত হয়েছে বলে, ‘মহুয়া বনের ধারে কয়লার খনি’তে রাত জেগে কাজ করার কারণে অবসন্ন শ্রমিকদের চোখ ঘুমহীন।

দুঃস্বপ্নের কারণ

নগরায়নের দূষণ যেমন নাগরিক মানুষদের ক্লান্ত করে, তেমনই ধোঁয়ার মতো প্রকৃতির অনাবিল পবিত্রতাকেও গ্রাস করে। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি যখন অসহীনয় হয়ে ওঠে, কবির চেতনায় মুক্তির স্বাদ নিয়ে আসে মহুয়ার দেশ। কিন্তু সেই স্বাদ অনাস্বাদিত‌ই থেকে যায় যখন দেখা যায় প্রকৃতির নিবিড় ছায়া থাকা মানুষগুলিরও স্বতন্ত্রতা নষ্ট হয়েছে প্রগতির থাবায়। সেখানে এখন পরিতৃপ্ত নয় উপলব্ধি হয় পুঁজিবাদের আগ্রাসনার মানবিকতার অবক্ষয়।

তাই মহুয়ার দেশের শিশির ভেজা সকালে অবসন্ন ক্ষেত্রে খাওয়া মানুষগুলির শরীরে দেখা যায় ধুলোর কলঙ্ক। অন্ধকারে নিস্তব্ধতায় ভেদ করে আসে কয়লা খনির ‌’গভীর’ শব্দ। মহুয়ার দেশের প্রকৃতি লগ্ন মানুষগুলো প্রকৃতির মত সরল জীবনে থাকতে পারেনি। অসহায় সেই মানুষগুলো সারারাত কয়লা খনিতে শ্রম দিয়েও জীবন থেকে অসাদ দূর করতে পারেনি, তাদের চোখ তাই আর স্বপ্ন নেমে আসে না, নেমে আসে দুঃস্বপ্ন।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment