‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে ‘ক্রন্দনরতা’ বলেছেন কেন? এই পরিস্থিতিতে কবি কি করা উচিত বলে মনে করেছেন?

জননীকে ক্রন্দনরতা বলার কারণ

‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’; কবিতাটিতে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত অনুভব করেছেন সমকালীন অবক্ষয়িত সময়ের অনিবার্য অভিঘাতে জননী-জন্মভূমি ক্রন্দনরতা। আলোচ্য কবিতায় ২০০৬ থেকে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গুরের কৃষি জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বঙ্গ রাজনীতিতে, সেই সূত্রে কবির জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল কবিতার মধ্যে বঙ্গ জননীর বেদনাবিদ্ধ রূপটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

কবি দেখেছিলেন শাসকের চোখ রাঙানি কেমন করে বন্ধ করে দিয়েছিল সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। শিল্পীর শিল্প সৃষ্টি অর্থ হারিয়েছিল ; মূল্যহীন হয়ে পড়েছিল ভালোবাসা, সমাজ, মূল্যবোধ শব্দ সমূহ। ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ কিংবা ‘যে-মেয়ে নিখোঁজ ছিন্ন-ভিন্ন/জঙ্গলে তাকে পেয়ে’ অধিকাংশ মানুষ নির্বিকার থাকলে ব্যক্তি জননী এবং সেই সূত্রে দেশ জননীর চোখ যে জলে ভরে যাবে এমন স্বাভাবিক কল্পনায় কবি আলোচ্য কবিতায় করেছেন। একদিকে খুনখারাবি-নারী লাঞ্ছনার মতো সামাজিক অনাচার, অন্যদিকে প্রতিবাদীহীন মানুষের মূল্যবোধের ভাঙ্গন জননী কে ক্রন্দনরতা করেছে বলে কবি মনে করেছেন।

কবি কি করতে চেয়েছেন

কবিতার যাবতীয় সংবেদন নিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পাশে থাকতে চেয়েছেন ক্রন্দনরতা জননীর। কিন্তু তিনি একা বিদ্রোহ করতে পারেন না জেনে কবিতায় শব্দের শক্তি দিয়ে মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন। সামাজিক অনাচারের প্রকৃত বিচারের জন্য তিনি বিধাতার শরণাপন্ন হননি, বিক্ষত বর্তমানকে সরিয়ে তুলতে চেয়েছে নিজেরই উদ্যোগে। কবির সজাগ বিবেক কবিকে বাধ্য করেছেন জননী-জন্মভূমির প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে, মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment