ভূমিকা
শিল্পী শিল্পী সৃষ্টির যাবতীয় শর্তকেই মান্যতা দিতে চান তার সৃষ্টিতে। কবি-সাহিত্যিকরা কাব্যসাহিত্যের বিষয়কে যতটা গুরুত্ব দেন, ঠিক ততটাই গুরুত্ব দেন আঙ্গিককে। বিষয় এবং আঙ্গিকের যথাযথ মেলবন্ধনের সাহিত্য হয়ে ওঠে শিল্পোত্তীর্ণ। কবি মৃদুল দাশগুপ্ত বাংলা সাহিত্যে অন্যান্য আধুনিক কবিদের মতোই আঙ্গিক-সচেতন। তিনি বিশ্বাস করেন যে অনুভব কবিতা বেয়ে প্রকাশিত হয়, আঙ্গিককে হতে হয় তার অনুগামী। ‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি ও কবির আঙ্গিক-সচেতনতার অন্যতম নির্দশন।
রচনাশৈলী
চারটি স্তম্ভ কে বিনাশ্থে আলোচ্য কবিতার প্রথম তিনটি স্তম্ভকে সমকালীন অবহিত সময়ের অনিবার্য অভিঘাতে বদলে যাওয়া সমাজ-মানসিকতা সম্পর্কে কবি তিনটি অব্যর্থ প্রশ্ন তুলেছে। শেষ স্তম্ভ কে পৌঁছে কবি সেই পরিস্থিতিতে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সহজ সরল ভাষায় প্রয়োগ কবির ভাবনা প্রকাশের অন্তরায় হয়নি কোথাও। প্রতিটি স্তম্ভবকে দ্বিতীয় এবং চতুর্থ পঙক্তির অন্ত্যমিল বজায় রেখে কবিতাটির মধুর্য বাড়িয়ে দিয়েছেন কবি। সরল কলা বিদ্য ছন্দের ব্যবহারে কবিতাটির পাট শ্রুতিমধুর হয়ে উঠেছে।
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি লেখা হয়েছে উত্তম পুরুষে। ‘আমি’, ‘আমার’ -প্রভৃতি সর্বনাম পদের ব্যবহারে কবিতাটির সঙ্গে পাঠকের অন্তরঙ্গতা নির্মাণের সাহায্য করেছে। কবিতাটির মধ্যে অবক্ষয়িত সমাজ-মানসিকতার বিরুদ্ধে কবির বিদ্রোহের সুর স্পষ্ট হয়ে উঠলেও, কবিতার শরীরে কোথাও বিদ্রোহের মেজাজ নেই। সময়ের অভিঘাতে আহত কবির সংযত শব্দ নির্বাচন কবিতাটিকে গীতিধর্মী করে তুলেছে। সর্বশেষ বলা যায়, আলোচ্য কবিতার নির্বাচিত শৈলী কবির বার্তা প্রকাশের সর্বাংশের সহযোগিতা করেছে।
দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর