‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’: কবিতায় যে জননী ক্রন্দনরতা তিনি কি কোন ব্যক্তিমানবী না দেশজননী-যুক্তি-সহ আলোচনা করো?

ভূমিকা

‘ধানক্ষেত থেকে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি কে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত মানব দরদী মন নিয়ে দেখিয়েছেন সমকালীন সময় যাবতীয় অবক্ষয় জননের চোখে জল এনে দিয়েছে। শাসকের রাজনীতি যখন পরিণত হয়েছে রণীতিতে, যখন রোজ দিন রক্তাক্ত হয়েছে সমাজের প্রতিটি কোণ ; তখন অনুভবই কবি মন তার যাবতীয় সংবেদন নিয়ে পাশে থেকেছেন ক্রন্দনরতা জননীর।

ব্যক্তিমানবী না দেশজননী

জননী ক্রন্দনরতা। যখন ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখা’টা কোন বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়, যখন জঙ্গলে নিখোঁজ মেয়ের ছিন্ন ভিন্ন দেহ খুঁজে পাওয়াটা মানুষকে বিস্মিত করে না আর, যখন ভালোবাসা-সমাজ-মূল্যবোধ শব্দ সমূহ তাৎপর্য হারিয়ে ফেলে; তখন আর এই বৃহত্তর ব্যথা কোন ব্যক্তিজননীর থাকে না, সমগ্র দেশজননীর হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তি মানুষই প্রতিষ্ঠা করে দেশের অস্তিত্ব। তাই ব্যক্তি মানুষের মন যখন বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়, দেশের মানব চিত্রে তার প্রতিফলন ঘটে। যে সময় ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি লেখা হয়েছে, সেই সময় সিঙ্গুরের কৃষি জমি আন্দোলনকে ঘিরে উতাল বাংলার রাজনীতি।

শাসকের চোখ রাঙ্গানিতে মানুষ হারিয়ে ফেলেছিল প্রতিবাদের ভাষা। ভাগ্যের হাতে ভবিষ্যৎ সঁপে দিয়ে নিরুপায় দেশবাসী অসহায় ভাবে জীবন যাপন করছিল। সংবেদনশীল মন নিয়ে কবি অনুভব করেছেন সমাজের এই গভীর অবক্ষয় সমগ্র বাঙালি জাতির হৃদয়ের ক্রন্দন। যে মায়ের বুক থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, যে মায়ের কোল শূন্য হয়ে গেছে, মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ; তাদের যন্ত্রণার শুধু তাদেরই থাকেনি, তা সঞ্চারিত হয়েছে কবির জননী-জন্মভূমি ও হৃদয়। অর্থাৎ আলোচ্য কবিতায় কবি কেবল কোন ব্যক্তি মানবের পাশে দাঁড়াননি, সমগ্র সৃষ্টি শালী সত্তা নিয়ে তিনি লগ্ন হয়ে থেকেছেন জননী-জন্মভূমি তথা দেশজননীর সঙ্গে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment