কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্বন্ধে ধারণা কী ছিল?

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি

[1] রাজতন্ত্র

  • ধর্মনিরপেক্ষ-প্রশাসনিক তত্ত্ব: অর্থশাস্ত্র হল ধর্মনিরপেক্ষ, প্রশাসনিক তত্ত্ব| ধর্মনিরপেক্ষ প্রশাসন পরিচালনার শিক্ষা দেয় অর্থশাস্ত্র।
  • রাজার ক্ষমতা: অর্থশাস্ত্র অনুসারে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজা। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গ এবং পার্থিব জগতে চূড়ান্ত সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী। তার কর্তৃত্বকে উপেক্ষা বা অমান্য করার ক্ষমতা কারও নেই। অবশ্য রাজার ক্ষমতার ওপর কিছু নিয়ন্ত্রণ আরােপের কথাও অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে। কেন না, রাজাই রাষ্ট্র নয়, তিনি রাষ্ট্রের অংশ মাত্র। রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেকের সাহায্য তাঁর প্রয়ােজন। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন রাজার মন্ত্রীমণ্ডলী। কৌটিল্য তার গ্রন্থে তিন প্রকার রাজস্বের কথা বলেছেন—সীতা, ভাগ এবং বলি। সীতা : রাজার খাসজমি সীতা থেকে রাজার ভালােই আয় হত। ভাগ: ভাগ অর্থাৎ প্রজার ব্যক্তিগত জমি থেকে উৎপন্ন ফসলের ১/৬ অংশ কর আদায় করা হত। বলি: বলি নামে একপ্রকার বাধ্যতামূলক কর আদায় করা হত। এ ছাড়া বন, খনি, শিল্প, আমদানি-রপ্তানি, পশুচারণ, পানশালা, কসাইখানা, জল, পথ প্রভৃতি থেকেও কর আদায় করা হত।
  • রাষ্ট্রে ধর্মনিরপেক্ষতা: কৌটিল্য রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের কথা বলেছেন।
  • শাসনকার্যে পুরােহিতদের গুরুত্বহীনতা: আধ্যাত্মিক বিষয়ে পুরােহিতের শ্রেষ্ঠত্ব ঘােষিত হলেও রাষ্ট্রে রাজার ক্ষমতাকে পুরােহিত কোনােভাবেই প্রভাবিত করার অধিকারী নন। পুরােহিত কোনাে শাস্তিযােগ্য অপরাধ করলে কৌটিল্য নির্দ্বিধায় তার চরম শাস্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন।
  • রাজার প্রতি রাজকর্মচারীদের আনুগত্য: উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পরিবর্তে রাজার প্রতি অনুগত থাকবেন বলে কৌটিল্যের নির্দেশ ছিল।
  • বিচারক নিয়ােগ পদ্ধতি: বিচারক পদে নিয়ােগের পূর্বে কৌটিল্য প্রার্থীর ধর্মীয় বিচার বিবেচনা উপেক্ষা করার মানসিকতা যাচাই করে নিতেন।

[2] রাষ্ট্রনীতি

  • রাষ্ট্রদর্শন
  • শাসকের নীতি: কৌটিল্য বলেছেন, রাজাকে কুটনীতি-পরায়ণ হতে হবে এবং রাষ্ট্রে বা শাসনব্যবস্থায় রাজাই একমাত্র সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। রাজাই রাজ্য, রাজা দুর্বল হলে রাষ্ট্র দুর্বল হতে বাধ্য।
  • রাজার কর্তব্য: ‘অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য রাজাকে কঠোর পরিশ্রম করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেছেন রাজার অবাধ ক্ষমতা থাকলেও তিনি কখনােই স্বেচ্ছাচারী হবেন না।
  • নৈতিকতায় গুরুত্বহীনতা: কৌটিল্য রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য যে-কোনাে পন্থা গ্রহণকেই সমর্থন করেন। তিনি বলেন যে, যুদ্ধই শান্তির একমাত্র পথ। রাষ্ট্রনীতিতে নৈতিকতার কোনাে স্থান নেই বলে তিনি মনে করেন।
  • মণ্ডলতত্ত্ব: তার মতে, সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্র হল স্বভাবজাত শত্রু এবং তার পরবর্তী রাষ্ট্র হল স্বভাবজাত মিত্র। এই দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের শত্রু ও মিত্র নির্ধারণ করতে হবে। কৌটিল্যের এই তত্ত্বকে ‘মণ্ডলতত্ত্ব’ বলা হয়।
  • প্রজাকল্যাণ: প্রজা সাধারণের মঙ্গলসাধন করা রাজার গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য ও দায়িত্ব। কৌটিল্যের মতে, রাষ্ট্র দুটি উপায়ে প্রজাকল্যাণের দায়িত্ব পালন করতে পারে-
  • দুর্গতদের কল্যাণ: রাষ্ট্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের সময় প্রজাদের ত্রাণ দেবে, কৃষকদের বীজ সরবরাহ করবে, মহামারি প্রতিরােধের উদ্যোগ নেবে, অসহায়, বৃদ্ধ ও বিধবাদের ভরণ-পােষণের দায়িত্ব নেবে ইত্যাদি।
  • সর্বসাধারণের কল্যাণ: সর্বসাধারণের কল্যাণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়িত করবে, অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিয়ে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করবে, সমাজ কল্যাণে মানুষকে উৎসাহিত করবে ইত্যাদি।
  • দুর্গ ও নগর নির্মাণ: বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরােধ ও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলে এবং চারিদিকে বিভিন্ন দুর্গ ও নগর নির্মাণের পরিকল্পনা করা রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে কৌটিল্য উল্লেখ করেছেন।
  • দুর্গ: কৌটিল্য চার ধরনের দুর্গের কথা বলেছেন পার্বত্যদুর্গ, অরণ্যদুর্গ, জলদুর্গ ও মরুদুর্গ। দুর্গ পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থসম্পদ, খাদ্যশস্য, ঔষধপত্র, সৈন্যসামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র, হাতি ঘােড়া প্রভৃতি থাকবে।
  • নগর: নগরগুলি বিশালাকার বাজার হিসেবে কাজ করবে এবং এখান থেকে রাষ্ট্র প্রভূত রাজস্ব অর্জন করতে পারবে।

History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)

Leave a Comment