এ কথা ইউরােপীয়েরা স্বীকার করতে চায় না | জাহাজের পেছনে বড়াে বড়াে হাঙ্গর ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে | সুয়েজখালে জাহাজ পারাপারের ব্যবস্থা বর্ণনা

ভারতের বাণিজ্যকে লেখক মানব-জাতির উন্নতির সম্ভবত সর্বপ্রধান কারণ বলেছেন কেন?

প্রাচীনকাল থেকেই ভারত ছিল এমন একটি সমৃদ্ধিশালী ভূখণ্ড, যাকে বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি বিভিন্ন সময় লুঠ করেছে, ব্যবহার করেছে নিজেদের দেশের ঐশ্বর্য বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য। আদিকাল থেকেই উর্বরতা, ব্যাবসাবাণিজ্য এবং শিল্পে ভারতের মতাে সমৃদ্ধিশালী দেশ আর একটাও ছিল না। বিশ্বের সেরা সুতিকাপড়, তুলা, পাট, নীল, লাক্ষা, চাল, হিরে, মােতি ইত্যাদি মূল্যবান বস্তু আলােচ্য প্রবন্ধটি রচনার ১০০ বছর আগেও ভারত থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হত। এ ছাড়া উৎকৃষ্ট রেশম, পশমিনা, কিংখাব এদেশের মতাে অন্য কোথাও হত না। প্রাচীনকাল থেকেই উৎকৃষ্ট মশলার স্থান ছিল ভারত। যেমন- লবঙ্গ, এলাচ, মরিচ, জায়ফল, জয়িত্রি ইত্যাদি। এসব ভারত থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করত বিদেশি বণিকেরা। তাই অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে উৎপন্ন দ্রব্যের ওপরই নির্ভর করে থাকত পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির ব্যাবসা বাণিজ্য। এভাবে ব্যাবসা বাণিজ্যের সূত্র ধরেই ভারতের সঙ্গে সকল দেশের সংস্কৃতির আদানপ্রদান ঘটে আর ভারতীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে যায়। যদিও পরবর্তীকালে, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ভারতের জিনিসপত্র ভারত অপেক্ষা উন্নত পরিমাণে উৎপন্ন হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের আর তেমন কদর ছিল না। বলে লেখক মত প্রকাশ করেছেন।

“এ কথা ইউরােপীয়েরা স্বীকার করতে চায় না”- কোন কথা ইউরােপীয়রা স্বীকার করতে চায় না এবং কেন?

প্রাচীনকাল থেকেই নানাবিধ প্রাকৃতিক সম্পদ ও রত্নসম্ভারে সমৃদ্ধিশালী আমাদের ভারতবর্ষের ওপরেই যে নির্ভর করে থাকত বর্তমানে ঐশ্বর্য-সম্পদে ফুলে-ফেঁপে ওঠা, ধনগর্বী দেশগুলির ব্যাবসা বাণিজ্য এবং ঐশ্বর্য-সমৃদ্ধি, এ কথা ইউরােপীয়রা স্বীকার করতে চায় না।

বর্তমানে ইউরােপীয়রা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সভ্যজাতি। অথচ ব্যাবিলন, ইরান, গ্রিস, রােম ইত্যাদি সকল দেশের বাণিজ্য একসময় ভারতের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। ফলে একসময় বিভিন্ন সভ্যজাতি ভারতে আসবার জলপথ আবিষ্কারে ব্যস্ত হয়ে ওঠে এবং শেষে পাের্তুগিজরা ভারতে আসার নতুন পথ আবিষ্কার করে নিজেদের বাণিজ্য সমৃদ্ধ করে। এরপর একে একে ওলন্দাজ, ফরাসি, দিনেমার, ইংরেজের আগমন ঘটে এবং মুক্ত উদার ভারতভূমিকে নিঃস্ব করে সবকিছু নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। বর্তমানে অবশ্য বিদেশেও অনেক উৎকৃষ্ট জিনিসপত্র উৎপন্ন হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বাভাবিকভাবেই ভারতের কদর কমেছে। তাই বর্তমানে উন্নত দেশগুলি স্বীকার করতে চায় না যে একসময় ভারতে উৎপন্ন সুতির কাপড়, তুলাে, পাট, নীল, লাক্ষা, চাল, হিরে, মােতি, রেশম, কিংখাব বা বিভিন্ন ধরনের মশলার ওপরই নির্ভর করে থাকত তাদের দেশের ব্যাবসা বাণিজ্য এবং আমদানি-রপ্তানি। ভারতের ন্যায় নেটিভ দেশের কাছে ঋণ স্বীকার করলে পাছে তাদের অহংবােধ এবং সভ্যতার প্রতি গর্ব বা অভিমান খর্ব হয়, সেকারণেই এই সহজ সত্য তারা স্বীকার করে না।

“জাহাজের পেছনে বড়াে বড়াে হাঙ্গর ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে।” -লেখকের অনুসরণে হাঙরের সেই ভেসে ভেসে বেড়ানাের দৃশ্য নিজের ভাষায় বর্ণনা করাে

সুয়েজখালে : হাঙ্গর শিকার রচনার লেখক স্বামী বিবেকানন্দের জাহাজ সুয়েজ বন্দরে দাঁড়ানাের পর সকালেই লেখক শুনতে পান যে, জাহাজের পেছনে বড়াে বড়াে হাঙর ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে। হাঙরের কথা শুনে লেখক সঙ্গীসাথী- সহ খুব দ্রুত জাহাজের পেছনদিকে পৌছান। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছাদ থেকে বারান্দার রেলিং ধরে দলে দলে নারী-পুরুষ- শিশু সামনে ঝুঁকে, মুখ বাড়িয়ে হাঙর দেখছিল। লেখকরা যখন সেখানে পৌছলেন, তখন হাঙররা আর সেখানে ছিল না। মনমরা হয়ে লেখক তাই হাঙরের আশায় জলের দিকে তাকিয়ে থাকেন। লক্ষ করেন যে, গাঙ্ধাড়ার মতাে দেখতে এক ধরনের মাছ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং খুব ছােটো আর একজাতীয় মাছ জলে কিলবিল করছে। এদের মধ্যে একটা-দুটো বনিটো মাছ তিরবেগে ছুটে বেড়াচ্ছে। প্রায় ৪৫ মিনিট পর এক যাত্রীর চিৎকার শুনে লেখক দেখেন যে, পাঁচ-সাত ইঞ্চি জলের ভিতরে থাকা অবস্থায় বিরাট বড় আকারের একটি কালাে বস্তু খানিকটা দূর থেকে জাহাজের দিকেই আসছে। কাছে এলে দেখা যায় যে, একটা প্রকাণ্ড চ্যাপটা মাথা নিয়ে কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে আসছে হাঙর নামধারী এমন এক বিরাটাকার দৈত্য। তার একবার ঘাড় ঘােরানােয় বিরাট আবর্ত তৈরি হচ্ছিল। নানাপ্রকার ছােটোবড়াে মাছকে সঙ্গে নিয়ে হাঙরটি গম্ভীর চালে জাহাজের দিকে এগিয়ে আসছিল।

সুয়েজখালে জাহাজ পারাপারের ব্যবস্থা বর্ণনা করাে।

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর পরিব্রাজক গ্রন্থের ‘সুয়েজখালে : হাঙ্গর শিকার প্রবন্ধে সুয়েজখাল পেরিয়ে ইউরােপের যাত্রাপথের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। এই খালটিকে খনন করেন বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি ফর্ডিনেন্ড লেসেন্স। এই খালের মাধ্যমে লােহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যে যােগসূত্র গড়ে তুলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বাণিজ্যের পথ সহজ ও প্রশস্ত করে তােলা সম্ভব হয়েছে। ফরাসিদের পরামর্শে ও অর্থব্যয়ে খালটি গভীরভাবে খনন করা হয় খালটি খুব চওড়া নয় বলে। একবারে একটিমাত্র বড়াে বাণিজ্যজাহাজ যেতে পারে এই খাল পেরিয়ে। তবে এর মধ্য দিয়ে অতি বৃহৎ বাণিজ্যতরি বা যুদ্ধজাহাজ একেবারেই যেতে পারে না। পরবর্তীকালে পাশাপাশি দুটি জাহাজের যাতায়াতের সংঘর্ষ এড়াতে খালটি কতকগুলি ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেকভাগের দুই মুখে কতকটা স্থান এমনভাবে প্রশস্ত করা হয়েছে যাতে দু-তিনটি জাহাজ পাশাপাশি থাকতে পারে। ভূমধ্যসাগরের মুখে এর প্রধান অফিস আর প্রত্যেক বিভাগেই একটি করে স্টেশন রয়েছে। কোনাে জাহাজ খালে প্রবেশ করা মাত্রই প্রধান অফিস থেকে তারের সাহায্যে খবর যেতে থাকে কটা জাহাজ আসছে, যাচ্ছে, বা জাহাজের অবস্থান ঠিক কোন্ জায়গায়। এসব তখন বড়াে নকশায় চিহ্নিত করা হয়। এজন্য এক স্টেশনের হুকুম না পেলে আর-এক স্টেশন পর্যন্ত জাহাজ যেতে পারে না। এইভাবে নিখুঁত পরিকল্পনায় জাহাজ পারাপার করে সুয়েজখালে।

বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণি)

Leave a Comment