“আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,”- বক্তা এ জীবনকে ‘দুঃখের তপস্যা’ বলে কেন চিত্রিত করেছেন?

দুঃখের তপস্যার বলার কারণ

রবীন্দ্রনাথ তার ‘শেষ লেখা’ (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে) কবিতাগ্রন্থের ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় জীবনকে আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’ বলেছেন। গভীর জীবন বোধের প্রগাঢ়তায় কবি এ উপলব্ধি করেছেন। কবির কাছে জীবন মানে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। রূপনারানের কূলে জেগে ওঠে কবিতায় অনুভব করেছিলেন দুঃখ, জড়া, মৃত্যু, ব্যাধি এ জীবনের প্রতিনিয়ত থাকবেই। ‘দুঃখের আঁধার রাত্রি’ কবিতায় কবি তাই বলেছেন-

“দুঃখের আঁধারে রাত্রি বারে বারে এসেছে আমার দ্বারে”

দুঃখ, মৃত্যুর ছলনা ও মিথ্যা আশ্বাসের প্রতারণা যে বুঝতে পারে, সেই ‘শান্তির অক্ষয় অধিকার’ লাভ করে। সমালোচক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন- ‘কঠোর দুঃখের তপস্যা করিয়া তিনি আত্মস্বরূপ দেখিতে পারিয়াছেন।”

রক্তের অক্ষরে কবি আপনার রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন, চিনেছেন : আঘাতে আঘাতে, বেদনায় বেদনায়’। জীবনের মিথ্যা কুহক ছেড়ে কবিতাই সত্যকে ভালবেসেছেন। কারণ সত্য কঠিন হলেও-

“সে কখনো করে না বঞ্জনা।”

দুঃখকে অতিক্রম করে সত্যের যথার্থতা উপলব্ধি করে কবি মনে হয়েছে ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন’।

জীবন দুঃখের দুঃসহ প্রবাহ

কবে দেখেছেন জীবন হল দুঃখ ও সুখের নিরন্তর প্রবাহ। কিন্তু তাই স্বরূপ উপলব্ধি করতে গিয়ে কবির মনে হয়েছে এ জীবন অনন্ত দুঃখ ও ব্যথায় আকীর্ণ দুঃসহ প্রবাহধারা। বাস্তবতার নির্মম আঘাতে আহত কবি চেতনারহিত হয়ে পড়েছেন। ক্লান্ত-শ্রান্ত-অবসন্ন কবি জীবনের অন্তিম লগ্নে সত্যকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাকুলতা অনুভব করেছেন-

“রূপ-নারানের কূলে জেগে উঠলাম,”

নবচেতনায় ঋদ্ধ কবি অবশেষে সংবিৎ খিদে পেয়েছেন।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment