“আমি কি তা দেখতে পাচ্ছিস নে?” -কোন প্রশ্নের উত্তর এ বক্তা এ কথা বলেছেন? গল্পানুসারে বক্তার রূপ উদঘাটন করো?

প্রশ্নের প্রেক্ষিত

এক থুথুড়ে বুড়ি মৃতকল্প দেহের দখল নিয়ে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ বিবাদোন্মুখ হয়ে ওঠে। বিবাদ যখন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের রূপ নিতে চলেছে, তখন হঠাৎ ঘুড়ি নড়ে চড়ে উঠে বসলে, তাকে জীবিত দেখে প্রথমে চৌকিদার, পরে দু দিকের জনতা হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে-‘বুড়ি, তুমি হিন্দু না মুসলমান? এই প্রশ্নের উত্তর এই বুড়ি শ্লেষের সঙ্গে প্রশ্ন প্রদত্ত কথাগুলি বলে।

ঘটনার পরম্পরা

গল্পে যে থুথুরে রাক্ষসী চেহারার বৃদ্ধাকে লেখক উপস্থাপিত করেছেন, তার নাম-সম্প্রদায়-যার ধর্মের কোন প্রসঙ্গ তিনি আনেননি। কিন্তু গল্পে তিনি আবহমান ভারতের পরস্পর বিবদমান‌ই ধর্ম সম্প্রদায় হিন্দু মুসলমানকে জোরালোভাবে উপস্থাপিত করেছেন। বৃদ্ধাকে একদিন সকালে নিঃসাড় অবস্থায় কিছু মানুষ এক বট গাছের কর্দমাক্ত খোঁদলে আবিষ্কার করে। ধরে নেয় সে মারা গেছে। সরকারি আইন রক্ষক চৌকিদারের পরামর্শে হিন্দুরা তাকে বাঁশের চ্যাংদোলায় নিয়ে ফেলে আসে নদীর চড়ায়। বিকেলে মুসলমানরা ওই একই চ্যাংদোলায় করে তাকে তুলে আনে বাজারে। গাঁয়ের মোল্লাসাহেব ও ভটচাজমশাই ক্রমাগত উস্কানিতে বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে সম্প্রদায়িক বিবাদ-বিসংবাদ শুরু হয়। ঘটনা যখন চরমে পৌঁছায় তখন বুড়ি নড়ে চড়ে উঠে বসে। প্রমাণিত হয় সে মরেনি।

বক্তব্যের স্বরূপ

বৃদ্ধার মুখে ব্যঙ্গমিশ্রিত ও জিজ্ঞাসাসূচক কথাগুলি আসলে লেখকের। তিনি বলতে চেয়েছেন, মানুষ মানুষই। সম্প্রদায় বা ধর্মগত পরিচয়টি তার ততটা মূল্যবান নয়। হিন্দু কিংবা মুসলমান কার‌ও গায়ে লেখা থাকে না। মানুষের আসল পরিচয় সে মানুষ। মানবিকতাই তার ধর্ম। তাই মানুষ পরিচয়টিকেই জীবনের প্রধান মূল্য দেওয়া উচিত, বাকি অমানবিক পরিচয় গৌণ। এ পরিচয় একবার মনে ঠাই পেলে মানুষ পূর্ণ হয়ে জেগে ওঠে।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment