“আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল,/নামুক মহুয়ার গন্ধ।” -কবির ক্লান্তির স্বরূপ ব্যাখ্যা করো?

শহুরে জীবন-যাপনের কবির ক্লান্তি

‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে কবি সমর সেনের নাগরিক জীবনের ক্লান্তি। যে জীবন তার অত্যন্ত পছন্দের, আলোচ্য কবিতায় সে জীবন সম্পর্কে প্রকাশিত হয়েছে তার অহীনা। যিনি সারা জীবন কবিতায় নাগরিকতার চর্চা করেছেন, তিনি এ কবিতায় লিখেছেন-

“মাঝে মাঝে সন্ধ্যার জলস্রোতে আসল সূর্য দেয় একে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ, আর আগুন লাগে জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায়। সেই উজ্জ্বল স্তব্ধতায় ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরেফিরে ঘরে আসে শীতের দুঃস্বপ্নের মত।”

ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্থ কবি

গভীর গাছের নগর জীবনের মুগ্ধতা সদূর প্রসারী হতে পারেনা দূষণ পূর্ণ পরিবেশ। যে কবি দেখেছেন-‘অগণন ধোঁয়ার ফণা, চিমনিতে চিড়েছে আকাশ’, যিনি উপলব্ধি করেছেন-‘দিকে দিকে আজ হানা দেয় বর্বর নগর’ ; তার কাছে নগর জীবন তো বিবর্ণ হয়ে পড়বেই। তাই কবি সমর সেন ‘কলকাতার কবি’ হয়েও শহুরে জীবনযাপনে ক্লান্তি অনুভব করেছেন।

অস্তগামী সূর্যের স্বর্ণালী আলোর আভাস যখন জলতলে প্রতিবিম্বত হয় ‘উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ’, আর সেই আলোয় যখন জলের ফেনা ছুঁয়ে দেয় আগুনের পরশমণির মতো রং; তখন কবি মন শহরে সেই সন্ধ্যার সৌন্দর্যে বুঁদ হয়ে থাকতে চাই, তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চায় নগর জীবনের স্বাদ। কিন্তু নিমেষেই ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতো’ কবির বেঁচে থাকাকে বিস্বাদ করে তোলে। শহুরে সভ্যতার ব্যস্ততা, একঘেয়েমি, হতাশা, অবসাদ কবিকে ক্লান্ত করে দেয়। শহুরে সভ্যতায় লালিত পালিত কবির কাছে এই নাগরিক জীবনের দূষিত ক্লান্তি তাই অসহ্য মনে হয়।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment