“আবার জমে গেল।…”-আবার কি জমে গেল? সেই জমে যাওয়া শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছেছিল?

কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে দেখা যায়, পৌষ মাসের অকাল দুর্যোগে চা দোকান তখন সরগম, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাঠে ও কাজ নেই।, তাই-“সবাই চলে আসে সভ্যতার ছোট্ট উনুনের পাশে হাত-পা সেঁকে নিতে।”তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু যেমন ছিল ইন্দিরা গান্ধী তেমনি সরা বাউরি ও ছিল। এমন সময় সেখানে এসে হাজির হয় এক থুথুড়ে বুড়ি, বুড়ি কে নিয়ে কৌতুহলী জনতা শুরুক করে কথার চাপান‌উতর। মজা মশকরা হয়। বুড়ি ঝাঁঝের সঙ্গে কথা কাটিয়ে, চা খেয়ে নড়বড়ে গতিতে চলে যায় দূরের বটতলার মুক্ত আশ্রয়। সবাই অনুমান করল বুড়ি এবার নির্ঘাত মরবে। এই প্রসঙ্গে বোরির কথায় আড্ডা আবার জমে গেল।

আড্ডার ক্রমপরিণতি

এই জমে যাওয়া শেষ পর্যন্ত যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল তাকে বলা যেতে পারে কাজিয়ার চূড়ান্ত। বুড়ি পরদিন সকালে বটতলায় মৃতা বলে আবিষ্কৃত হয়। সে প্রকৃত মৃতা কিনা, তার মীমাংসা না করেই চৌকিদারের পরামর্শ এ মরা ভেবে বুড়িকে ফেলে আসা হয় নদীর চড়াই। তা করে হিন্দুরাই। বিকেলে দেখা যায়, মোল্লা সাহেবের পরামর্শে কিছু মুসলমান ওই মরাকেই ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে বাজারে।

শেষ পরিণাম

হিন্দু-মুসলমানের এই নিয়ে বাঁধে বচসা। বজ্রসা থেকে শুরু হয় ধর্মীয় বাগবিতন্ডা। তারপর বুড়ির মৃতদেহ কবর হবে না দাহ-এই নিয়ে তুমুল বিবাদ এক সময় প্রায় দাঙ্গায় পৌঁছে যায়। বেরিয়ে আসে হাতে হাতে মারাত্মক সব অস্ত্রশস্ত্র। এমন সময় বুড়ি তথাকথিত মৃতদেহ নড়ে ওঠে, উঠে বসে। মানুষজন চমকে ওঠে, বিপন্ন হয়। এই বিপন্নতার মধ্যে বুড়ি মানুষের সংকীর্ণ ধর্ম-বুদ্ধি মারিয়ে দূরে, আরও দূরে মিলিয়ে যায়।

দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায় অনুযায়ী তার সব প্রশ্নের উত্তর

Leave a Comment