সমস্যা সমাধানমূলক শিখন কৌশলের একটা অন্যতম শিখন বলতে পারি অন্তদৃষ্টি মূলক শিখন কৌশল কে। সমগ্রতাবাদী মনোবিদগণ পরীক্ষা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত করলেন যে, ক্ষেত্রে কিন্তু প্রাণীরা পচেষ্টাও ভুলের মাধ্যমে বা পদ্ধতি দ্বারা শিখতে পারেনা।
সাধারণত সমসামূলক পরিস্থিতির সামগ্রীর রূপ উপলব্ধির মাধ্যমেই প্রাণীরা সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়ে থাকে। প্রাণীর মধ্যে এই উপলব্ধি হঠাৎ করেই চলে আসে।
কোহলার শিখনের পরীক্ষা-নিখার জন্য যে সকল প্রাণীকে নিয়েছিলেন সেগুলোর মধ্যে খুবই উল্লেখযোগ্য হলো মুরগি, শিম্পাঞ্জি প্রকৃতি। তবে কোহলারের শিখন সম্পর্কিত খুবই জনপ্রিয় বিখ্যাত পরীক্ষা হল শিম্পাঞ্জি নিয়ে।
পরীক্ষা
কোহলার ১৯১৩ থেকে ১৩১৯ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত আমেরিকার ক্যানালি দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট একটি দ্বীপ শিখনের উপর শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে পরীক্ষা করার কথা সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা সম্পর্কে সমস্ত বিষয়বস্তুটি নিম্নে পয়েন্ট আকারে আলোচনা করিলাম।
পরীক্ষার জন্য প্রাণী ও প্রয়োজনীয় উপকরণ
কোহলার তার পরীক্ষার জন্য প্রাণী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন শিম্পাঞ্জি সুলতানা কে। এবং তাছাড়া আরও অন্যান্য উপকরণ ছিল যথা – খাঁচা এবং দুটি বাঁশের লাঠি, যেগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করে একটি লম্বা লাঠি করা যায়। আর তার সঙ্গে ছিল অতিপ্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু।
পরীক্ষার পরিস্থিতি সমূহ
এখানে শিম্পাঞ্জি কে নাম দেওয়া হয়েছিল সুলতান। অতএব প্রথমে এই সুলতানকে খাঁচার মধ্যে ঢুকে দেওয়া হয়। এবং সঙ্গে দুটো বাঁশের লাঠি এবং একটি মোটা এবং অপরটির সরু লাঠি দেওয়া হল। এবং সুলতানা কে যেই খাঁচার মধ্যে রাখা হয়েছিল ওই খাঁচার থেকে এমন দূরত্বে খাবার বা খাদ্য বস্তু রাখা হয়েছিল, লাঠির সাহায্য ছাড়া খাদ্য বস্তুকে নিজের কাছে নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না ওই শিম্পাঞ্জির।
পর্যবেক্ষণ
এবং পরীক্ষার পর্যবেক্ষণ টি আমরা এখানে চারটি পর্যায়ে বা ভাগে ভাগ করে দেখব। অতএব পর্যায়ে গুলি হল-
প্রথম পর্যায়ে:- প্রথমদিকে শিম্পাঞ্জি ওই খাবারটি নিজের কাছে নিয়ে আসার জন্য লাঠির সাহায্য নিয়েছিল, তবে কিন্তু লাঠিটা ছোট থাকার কারণে খাদ্য বস্তুর কাছে কিন্তু পৌঁছতে পারেনি।
দ্বিতীয় পর্যায়ে:- দ্বিতীয় পর্যায়ে দুটি লাঠিকে পরস্পর ঠেলা দিয়ে খাদ্য বস্তুর কাছে লাঠিরা পৌঁছে দিল। কিন্তু খাদ্যবস্তুকে তার কাছে নিয়ে আসতে অসফল হল। কারণ ততক্ষণ পর্যন্ত সে বুঝতে পারেনি যে দুটি লাঠিকে পরস্পর কিভাবে জোড়া লাগাতে হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে:- আবারো তাকে দুটি লাঠি দেওয়া হল এই খাদ্য বস্তুটিকে তার কাছে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু সে দুটি লাঠি নিয়ে খেলা করতে শুরু করল। তারপর কোহলার শিম্পাঞ্জিকে কিছু ইঙ্গিত বা ইশারা দিল যার সাহায্যে সে লাঠি দুটোকে জোড়া লাগাতে সক্ষম হয়। কিন্তু তাতেও শিম্পাঞ্জিটি অসফল হলো অর্থাৎ জোড়া লাগাতে পারলো না।
চতুর্থ পর্যায়ে:- শিম্পাঞ্জি দুটো লাঠি নিয়ে খেলা করতে করতে একসময় ভুলবশত দুটো লাঠি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হলো। এবং ওই জোড়া লাঠি দুটোকে নিয়ে খাদ্যবস্তুকে নিজের কাছে টানতে সক্ষম হলো। অর্থাৎ এখান থেকে সে কিন্তু একটি সমস্যা সমাধান পেল।
সিদ্ধান্ত
সামগ্রিক রূপ উপলব্ধি: এই পরীক্ষার ফল থেকে কোহলার সিদ্ধান্ত করলেন সব ক্ষেত্রে কিন্তু প্রাণীরা প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শেখা সম্ভব হয় না। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন এর মাধ্যমে শিখে থাকে।
সমগ্রভাবে প্রত্যক্ষণ: প্রাণী যখন কোন বিষয়ে প্রত্যক্ষ করে তখন বিষয়টিকে খন্ড খন্ড ভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে প্রত্যক্ষ না করে সামগ্রভাবে প্রত্যক্ষ করে। বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে যদি নৈকট্য বা সাদৃশ্য থাকে তাহলে সেগুলোকে খণ্ড খণ্ড বা বিচ্ছিন্নভাবে প্রত্যাক্ষণ না করে একটি সমগ্র বা একক হিসেবে প্রত্যক্ষ করে।
হঠাৎ প্রত্যক্ষণ: সমস্যা মূলক পরিস্থিতিতে সামগ্রিকভাবে উপলব্ধি হঠাৎ প্রাণের মধ্যে আসে, অর্থাৎ প্রত্যক্ষণ ঘটে।
অন্তদৃষ্টির মাধ্যমে সংগতিবিধানের ক্ষমতা বিকাশ: সমস্যা মূলক পরিস্থিতিতে বিশেষ একটি মুহূর্তে শিম্পাঞ্জির সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্তদৃষ্টির জাগরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীটি ইঙ্গিত পায় এবং তার সংগতিবিধানের ক্ষমতা বিকাশ ঘটে।
অবশেষে বলা যেতে পারে অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে সমস্যা সমাধানের সূত্রটি যখন পাওয়া যায়, তখন ভুল প্রচেষ্টা গুলি বর্জিত হয়। এরকম বিভিন্ন কারণে মনোবৈজ্ঞানিকগণ ভুল সংশোধনের প্রচেষ্টাকে একেবারেই অস্বীকার করেননি।
দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর
প্রাচীন অনুবর্তন বলছে আমরা কি বুঝি?
প্যাভলবের প্রাচীন অনুবর্তন পরিবর্তন কৌশল ও তার পরীক্ষা
প্রাচীন অনুবর্তনের শর্তাবলী, নীতি ও গুরুত্ব?
অপারেট অনুবর্তন কি ও তার স্কিনার বক্সের পরীক্ষা
শিক্ষা ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তন এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব এবং পার্থক্য
প্রচেষ্টা ও ভুলের পরীক্ষা শিখন কৌশল থনডাইকের ভূমিকা
প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বের শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
গৌণ সূত্রাবলী কি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য