শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্তদৃষ্টি মূলক শিখন কৌশলের শিক্ষাগত গুরুত্ব
অন্তর দৃষ্টি মূলক শিখন কৌশল আধুনিক শিক্ষাকে অনেক দিক থেকে প্রভাবিত করেছে তার কোন সন্দেহ নেই। তাই বর্তমানেও এই শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যালয় সংযুক্ত করা হয়েছে।
সামগ্রিকতাবোধ
এই মতবাদ অনুযায়ী আমাদের শিখন পরিস্থিতির সামগ্রিক বোধের উপর নির্ভর করে। তাই শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় বিষয়বস্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে উপস্থাপন করে সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
সমগ্র থেকে বিশেষের দিকে
সমগ্র থেকে বিশেষের দিকে আধুনিক শিক্ষার এই নীতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মতবাদ গড়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদানের সময় সামগ্রিক বিষয়টি উপস্থাপনের পর সেগুলিকে খন্ড খন্ড ভাবে বিশেষণ করতে হবে।
৩ মুর্ত থেকে বিমুর্তের দিকে
এই শিখন এর কৌশল মুর্ত থেকে বিমুর্তের দিকে যাওয়ার নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তাই শিক্ষার্থীকে বাস্তব শিক্ষাদান করতে হবে। পরে বিমূর্ত বিষয়ের সম্পর্কে তারা ধারণা লাভ করবে।
৪ সক্রিয়তা
গেসাল্ট মতবাদ অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা উপাদান। তাই শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে সক্রিয়তা করে তোলার জন্য শিক্ষক শিক্ষার্থীকে জীবন পরিবেশের সঙ্গে সম্পূর্ণ যুক্ত করে উপস্থাপন করবে।
৫ সামান্যনিকরণ
গোসাল্টবাদীরা শিখন এর ক্ষেত্রে সামানিকরণ ও পৃথ্বীকারনে উপর বিশেষ গুরুত্ব অলোপ করেছেন। সুতরাং, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামনে যে সমস্যাটি উপস্থাপন করবে তা যেন তার ক্ষমতা বাইরে না হয়। সেই জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
৬ সম্পর্ক স্থাপন
অন্তর্দৃষ্টি ঘটে সামান্যমূলক পরিস্থিতিতে অংশগুলির মধ্যে যথার্থ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে। তাই শিক্ষক এমনভাবে সমস্যা উপস্থাপন করবেন। যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বিষয়টি বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হতে পারে।
৭ সামঞ্জস্য বিধান
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি সঙ্গে শিখন প্রক্রিয়ার সামঞ্জস্য কিন্তু রাখবেন। অর্থাৎ বিষয়গুলোর মধ্যে একটু ছন্দ রেখে শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করতে হবে। যাতে করে বিষয়বস্তুটা একটু মজাদার হয়ে ওঠে।
৮ প্রয়োজনীয় পরিবেশ রচনা
গোসাল্ট শিখন কৌশলে প্রাণীর শিখন এর জন্য একটি পরিবেশ রচনা হয়েছে। এবং তার মাধ্যমে কিন্তু প্রাণীরা শিক্ষা করতে পেরেছিল। তাই শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষক প্রয়োজনীয় পরিবেশ রচনা করে তাদের আগ্রহের মনোভাবটা বিপুল করে তুলবে।
৯ চিন্তাও কল্পনা শক্তির বিকাশ
শিক্ষার্থীর বিভিন্ন ধরনের কল্পনা ও ভাবনা শক্তি এবং বিচার শক্তির বিকাশ ঘটে যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করবে।
অবশেষে বলা যেতে পারে যে এই অন্তর্দৃষ্টি মূলক শিখন কৌশল আধুনিক সমাজ বা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিভিন্ন দিক থেকে প্রভাবিত করেছে। তাই বর্তমানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর শিখনে এই মতবাদকে প্রত্যক্ষভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিদ্যালাগুলিতে শিক্ষক শিক্ষাদানের সময় শিক্ষার্থীদের কাছে বিষয়বস্তু এবং অর্থপূর্ণ ভাবে তাদের কাছে উপস্থাপন করছে। যাতে করে শিক্ষার্থী খুব সহজেই বুঝতে পারে।
প্রচেষ্টা ভুলের শিখন তত্ত্বের সঙ্গে আন্তিষ্টমূলক শিখন তত্ত্বের পার্থক্য
সমস্যা সমাধান মূলক শিখন এর কৌশল দুটি হল প্রচেষ্টা ভুলের শিখন কৌশল এই অন্ত দৃষ্টি মূলক শিখন এই অন্তর্দৃষ্টি মূলক শিখন এর কৌশল। এই দুটি তত্ত্ব সমস্যার সমাধানের প্রথম প্রতিক্রিয়া (S-R) সংক্রান্ত কৌশল এবং দ্বিতীয়টি জ্ঞানমূলক কৌশল। এই শিখন পার্থক্য দেখা যায়, তা আমরা নিচে আলোচনা করলাম।
প্রথমত: প্রচেষ্টা ভুলের শিখন কৌশল বলতে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার সংযোগ কে বোঝায়। কিন্তু অপরদিকে অন্তর্দৃষ্টিমূলক কৌশল বলতে শিক্ষার্থীর জ্ঞানমূলক সংগঠনের পূর্ণ বিনাশ কে বোঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: প্রচেষ্টা ভুলের শিখন কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হলো উদ্দীপক প্রতিক্রিয়ার বন্ধনকে চর্চার মাধ্যমে শক্তিশালী করা, কিন্তু অপরদিকে অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন কৌশলে এর মূল উদ্দেশ্য হলো তার বৌদ্ধিক সংগঠনের মধ্যে সক্রিয় পূর্ণ বিনাশ ঘটানো।
তৃতীয়: এই প্রচেষ্টা ভুলের শিখন কৌশলের মূল বিষয়বস্তু হলো নতুন প্রতিক্রিয়া নিজের আয়তনে নিয়ে আসার ক্ষমতা, কিন্তু অপরদিকে অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন কৌশলের মূল বিষয়বস্তু হলো বস্তু ধর্মী জ্ঞান অর্জনে শিক্ষার্থীকে সহায়তা করা।
চতুর্থ: এই শিখন কৌশল সব ক্ষেত্রে আংশিক প্রতীকের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কিন্তু, এবং অপরদিকে অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন কৌশলের ক্ষেত্রে সমগ্র পরিস্থিতির অবয়বের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
পঞ্চম: প্রচেষ্টা ভুলের শিখন কৌশলের সূত্রগুলিতে শিখনের কতকগুলি প্রতিক্রিয়ার যৌগিক সমবায় হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু অপরদিকে অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন কৌশলে অভিজ্ঞতা একক সম্বন্ধিত অভিজ্ঞতা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ষষ্ঠ: প্রচেষ্টা ভুলের শিখন কৌশলে শিখন পরিস্থিতির বস্তুগত দিকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু অপরদিকে অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন কৌশলে শিখন পরিবেশের মনস্তাত্ত্বিক দিককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সপ্তম: এই শিখন কৌশলে শিখন অবস্থা থেকে জটিল অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু অপরদিকে শিখন সমগ্র দিক থেকে অংশের দিকে অগ্রস হয়।
অষ্টম: প্রচেষ্টা ভুলের শিখন কৌশলের প্রকৃতি হল যান্ত্রিক কিন্তু অপরদিকে এই শিখন কৌশলে শিক্ষার্থীর সক্রিয়তার সঙ্গে নিজের থেকে শিখন পরিস্থিতিতে প্রক্রিয়া করতে শেখে।
নবম: এই প্রচেষ্টা ভুলের শিখন কৌশলে বহির আচরণের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু অপরদিকে এই শিখন কৌশলে ধারণা, সমস্যা, সমাধান ইত্যাদি এইসব দিকে বেশি ভাবে গুরুত্ব দেওয়া থাকে।
দশম: এই শিখন কৌশলে শিক্ষার্থীর দক্ষতা অভ্যাস ইত্যাদির মত পুনরাবৃত্তিমূলক যান্ত্রিক শিখন ব্যবস্থা করতে পারে, কিন্তু অপরদিকে অন্তদৃষ্টি মূলক শিখন কৌশলে ধারণা, সমস্যা, সমাধান ইত্যাদির মতো উন্নত ধরনের শিখন কে ব্যাখ্যা করতে পারে।
তো অবশেষে বলা যেতে পারে যে দুই শিখন কৌশলের পার্থক্য থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন মিল পাওয়া যায় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। তবে প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখনের কৌশলের মাধ্যমে কোন বিষয়ে শিখলে সেই বিষয়ের স্থায়িত্বের চেয়ে অন্ত দৃষ্টির মাধ্যমে শিখনের তার স্থায়িত্ব অনেক বেশি হয়। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিখনের সময় মন দিয়ে অথবা অন্তদৃষ্টি মূলক শিখন কৌশলে মাধ্যমে শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাবিজ্ঞানের (education) সব প্রশ্ন উত্তর
প্রাচীন অনুবর্তন বলছে আমরা কি বুঝি?
প্যাভলবের প্রাচীন অনুবর্তন পরিবর্তন কৌশল ও তার পরীক্ষা
প্রাচীন অনুবর্তনের শর্তাবলী, নীতি ও গুরুত্ব?
অপারেট অনুবর্তন কি ও তার স্কিনার বক্সের পরীক্ষা
শিক্ষা ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তন এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব এবং পার্থক্য
প্রচেষ্টা ও ভুলের পরীক্ষা শিখন কৌশল থনডাইকের ভূমিকা
প্রচেষ্টা ও ভুলের তত্ত্বের শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
গৌণ সূত্রাবলী কি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য